লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে না পেরে অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুমোদনবিহীন বা নিয়মবহির্ভূত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের শিক্ষার্থীদের সরকারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করছে। এসব স্কুলে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ভর্তি কার্যক্রম থেকে শুরু করে পরীক্ষা নেওয়া পর্যন্ত সবকিছু চলছে। ফলে শিক্ষার মান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। এ অবস্থায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক অবৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব পরিকাঠামো না থাকায় বা সরকারি অনুমোদনের অভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ও পরিচয়ে পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন করায়। পরে এসব শিক্ষার্থী অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পরীক্ষা দেয়। এতে সংশ্লিষ্ট অনুমোদিত স্কুলগুলো নিজেদের নাম ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ২০২১ সাল থেকে বৈধ-অবৈধ সব কিন্ডারগার্টেনে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ফলে অনুমোদন না থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। এতে অবৈধ এসব স্কুল মালিকদের ‘শিক্ষা ব্যবসায়’ টিকে থাকা সহজ হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় কিন্ডারগার্টেনে এইচএসসি স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশে পরীক্ষা দিতে না পেরে অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অপরিচিত পরিবেশে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এতে তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ছে।
এক শিক্ষার্থী জানান, "আমরা নিজেদের স্কুলে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিই। কিন্তু পরীক্ষার দিন অন্য স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এটা আমাদের জন্য অনেক কঠিন।"
অভিভাবকদের অভিযোগ, এসব স্কুলে ভর্তি ও টিউশন ফি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হলেও শিক্ষার মান ও পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা আরও বলেন, "আমরা সন্তানদের জন্য ভালো শিক্ষা চাই। কিন্তু তারা নিজের স্কুলে পরীক্ষা দিতে পারছে না এটা লজ্জার।"
পৌর শহরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে পারে, তা নিশ্চিত করার এখনই সময়।
উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা মাইনুল হোসেন জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। তবে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয় শিক্ষাবিদদের মতে, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।