ঢাকা, শুক্রবার ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬শে পৌষ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে নিয়ম বহির্ভূত বহুতল ভবনের ফাইলিংয়ে বিধ্বস্ত সড়ক-দোকানপাট, ঝুঁকিতে ভবন

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারী ২০২৫ ০১:৪৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

লক্ষ্মীপুরে ওয়ে হাউজিং নামে একটি কোম্পানীর নিয়ম বহির্ভূত বহুতল ভবনের ফাইলিংয়ের কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। একই সাথে পাশে থাকা দুটি দোকান এবং একটি কবরস্থান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় আশপাশের ভবনগুলো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে সড়ক বিধ্বস্তের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গ্যাস লাইন। এতে সংযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় সহশ্রাধিক পরিবারের রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে পড়েছে।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ ফারাবী ও প্রকৌশলী জুলফিকার জুয়েলসহ পৌরসভার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার শাখারি পাড়া সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

পৌর কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, ভেঙে যাওয়া দোকানগুলোর পেছনে একটি পুকুর রয়েছে। হাউজিংয়ের অনিয়ন্ত্রিত ফাইলিংয়ের কারণে মাটির তলদেশ পানির স্তর সৃষ্টি হয়। ভেক্যু দিয়ে সম্প্রতি প্রায় ৩০ ফুট মাটি খুড়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো হাউসজিং কোম্পানী। এতে মাটির তলদেশে সৃষ্টি হওয়া স্তর দিয়ে পানি নির্মাণাধীণ এলাকায় ঢুকে পড়ে। একপর্যাতে পানির চাপ বেড়ে রাস্তা দেবে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পাশের দুটি দোকান ভেঙে গেছে। যুক্তবাংলা আইন পরিষদের সদস্য মরহুম আব্দুল হাকিম উকিলের কবরস্থান ভেঙে যায়। এখন ফাটলসহ আশপাশের ভবনগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক শাহিন কাদির রিপন বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ফাইলিংয়ের কারণেই মাটি সরে গিয়ে আমার দুটি দোকান ভেঙে গেছে। এতে আমার অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় ভবন মালিক শামছুল আলম বলেন, নিয়ম বহির্ভূত ফাইলিংয়ের কারণেই সড়কে দেবে গেছে। পাশে দুটি দোকান ভেঙে গেছে। আমার ভবনটি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এস এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, গ্যাস লাইনে আগুন ধরে যাওয়ার কারণে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী রোববার কুমিল্লা থেকে লোকজন এসে কাজ করবে। কাজ শেষে গ্যাস সংযোগ চালু হবে।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী জুলফিকার হোসেন বলেন, ওয়ে হাউজিংকে ৭ তলা ভবনের অনুমতি দিয়েছি। তারা ১০ তলা ভবনের অনুমতি নিয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। ফাইলিং নিয়ম অনুযায়ীই চলছিল। কিন্তু পাশেই পুকুর থাকায় মাটির নিচ দিয়ে পানির স্তর পেয়ে যায়। যার কারণে সড়কটি দেবে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে সড়ক আর ড্রেনের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আপাতত তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণ ও সড়ক সংস্কার শেষ হলেই কাজের অনুমতি দেওয়া হবে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।

ওয়ে হাউজিংয়ের এজিএম হাসান আহমেদ বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ীই কাজ করছি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটনাটি ঘটে গেছে। আমরা ভবনটি ১০ তলা করবো। পৌরসভা থেকে ৭ তলার অনুমোদন রয়েছে। আপাতত ওই ৭ তলা ভবনই হবে। সড়ক ও দোকান মালিকদের ক্ষতিপূরণ আমরা দিয়ে দেবো। সড়কের যেন বেশি ক্ষতি না হয়, সেজন্য আমরা ইতিমধ্যে মাটি ফেলে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।