সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তদারকী সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুসহ নির্বাচন ব্যবস্থা আমূল সংস্কার, নির্বতনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, চাল-ডাল-তেলসহ-নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো এবং গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী গরীব মানুষদের রেশনিং এর দাবিতে- কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপি বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে ১৬ সেপ্টম্বর বেলা সাড়ে ১১ টায়, বগুড়া সাতমাথায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ জেলা আহ্বায়ক কমরেড অ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টুর সভাপতিতে¦ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদ বগুড়া জেলা সদস্যসচিব কমরেড অ্যাড. দিলরুবা নূরী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা সভাপতি সাইফুজ্জামান টুটুল প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
কমরেড অ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন- মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ দেশি বিদেশি লুটেরা গোষ্ঠির দুর্নীতি-দুঃশাসন ও লুণ্ঠনের লীলাভূমি। গণতন্ত্রহীনতা এবং ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনই আজ দেশকে দুর্নীতি, লুটপাট ও টাকা পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য করে তুলেছে। জনগণের গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের উচ্ছেদ করে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাছাড়া জনগণের মুক্তি আসবে না। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য পণ্যের দাম গত এক বছরে বেড়েছে ৫০ ভাগ থেকে ৮০ ভাগ। দেশের ১৭ কোটি মানুষ এখন বাজার সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। আর এই সিন্ডিকেট এর পাহারাদারের ভূমিকায় আছেন বর্তমান বিনা ভোটের স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী সরকার। দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতিতে জনগণের জীবন যাত্রার ব্যয় বহুগুণে বেড়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনজীবন দুর্বিসহ সংকটে পড়বে। তাই তিনি বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য পণ্যের দাম কমানো, গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর এবং নির্বতনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের জোর দাবি জানান ।
কমরেড অ্যাড. দিলরুবা নূরী বলেন, অতীতের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত সাইবার নিরাপত্তা আইনটিও সমালোচনা, ভিন্নমত ও মুক্তচিন্তা দমনের ক্ষেত্রে সরকারের হাতে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার, ২৭ ও ৩২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১ কোটি টাকা জরিমানা এবং ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান, ২৮ ধারায় (ঘৃণ্য ব্লাসফেমি আইনের নবসংস্করণ) ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের শাস্তির নামে ২ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাস্তবে সাংবাদিক ও সচেতন মানুষদের হয়রানির কাজে ব্যবহৃত হবে। ফলে সাইবার নিরাপত্তা নয়, ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা নিরুপদ্রুপ করাই এ আইন পাশ করার অন্যতম উদ্দেশ্য।
অন্যন্য নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের সমগ্র নির্বাচনি ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দল দেশে আরও একটি একতরফা নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। নির্বাচন পুরোপুরি টাকার খেলায় পর্যবসিত হয়েছে। ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ এই সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চনের কোন অবকাশ নেই। এ কারণে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সকল দল ও সমাজের অপরাপর অংশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই নেতৃবৃন্দ গোটা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার দাবি জানান।