সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলা’র মানুষের গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি নদ-নদী, খাল-বিল। কালের বিবর্তে নদ নদীর সাথে সংযুক্ত খাল-বিল দখল দূষণ আর ভরাট হয়ে তার জৌলুশ হারিয়েছে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে পানির আধার খ্যাত খাল ও নদ নদী শুকিয়ে যায়।
সে কারণে অত্র অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ কৃষি, মৎস্যসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভিত্তিক খামার উৎপাদনে চরম হুমকির সম্মুখীন ছিলেন। বর্তমান সরকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র দাবী মরিচ্চাপ নদী খনন। সে দাবী দীর্ঘ দিন পর বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। সরকার ৩৭ কিলোমিটার মরিচ্চাপ খননে ইতিমধ্যে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। মরিচ্চাপ খননে যে সুফল অববাহিকার মানুষ ভোগ করবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট না থাকায় ভুক্তভোগীদের দাবির প্রেক্ষিতে মরিচ্চাপ খননের জন্য সংযুক্ত ১২টি খাল খনন জরুরী। সে কারণে ৭২ কিলোমিটার খাল খননের জন্য ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (ওটিম) প্রকল্প গ্রহণ করে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি আহবান করে। সরেজমিন ঘুরে মরিচ্চাপ অববাহিকার সংযুক্ত খালের সুবিধাভোগীরা এ প্রতিবেদকে জানিয়েছে, বিপুল টাকায় কেবলমাত্র মরিচ্চাপ খনন হলে কোন কাজেই আসবে না। সাথে ১২টি সংযুক্ত খাল খনন করতে হবে। আর এ খালগুলি খনন করা হলে সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলার মানুষ মরিচ্চাপ খননের সুফলভোগ করবে।
যে সমস্ত খাল গুলো খননের জন্য এলাকাবাসী দাবি করেছে সে গুলো হলো আরকানি খাল, আবাদি খাল, কোলকাতা খাল, কুমারখালী খাল, শংকারা খাল, টিকেট খাল, দারার খাল, দারার খাল-২, গৌরীচন্ডী খাল, হিমখালী খাল, বোয়ালিয়া খাল ও ডাউরিয়া খাল। এ বিষয়ে কথা হয় সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়েরের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদকে জানিয়েছেন মরিচ্চাপ খনন হলে সাতক্ষীরা পৌরসভা, সদর উপজেলা ও দেবহাটা উপজেলার সাথে সাপমারা নদী, ইছামতি নদী ও মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ স্থাপন হবে। আর এ সংযোগ স্থাপন করতে সংযুক্ত ১২টি খাল মরিচ্চাপের সাথেই খনন করতে হবে। সে কারণে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ (পিপিএ-২০০৬) ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ (পিপিআর-২০০৮) এর অধিনে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম) প্রকল্পে স্মারক নং: আইটি-১টি-৪/৬৫১, তারিখ: ১০/১০/২০২১ ইং তারিখে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নের জন্য চলমান প্রক্রিয়াকে একটি স্বার্থন্বেসী মহল ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য উচ্চ আদালতে ১৭/১০/২০২১ ইং তারিখে ও ১৪/১১/২০২১ ইং তারিখে একই বিষয়ের উপর দুটি রিট পিটিশন দাখিল করেছে। ইতিমধ্যে রিট পিটিশনের জবাব সু-স্পষ্টভাবে প্রদান করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কাজ চলমান রাখার কোন আইনী জটিলতা ছিল না। কিন্তু একই বিষয়ে মেসার্স শফি এন্টার প্রাইজের মালিক শফিউর রহমান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ইয়ারুল ইসলামের মাধ্যমে আবারও রিট পিটিশন দাখিল করে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ইয়ারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে, দুটি রিট পিটিশন দাখিল করার কথা স্বীকার করেন। পাউবো কর্তৃক পিটিশনের জবাব তিনি হাতে পান নি।
এ বিষয়ে রিট পিটিশনের বাদী শফিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তিনিও পৃথক পিটিশন দাখিলের কথা স্বীকার করেন। পাউবো কর্তৃক রিট পিশনের জবাব হাতে পেয়েছেন এবং কোর্টেও জমা দিয়েছেন। তবে রিট পিটিশন দাখিলকারী আইনজীবি কেন হাতে পাননি এটা নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর, পৌর ও দেবহাটা উপজেলার কৃষি ও মৎসজীবিদের প্রাণের দাবি মরিচ্চাপ খননের সাথে সাথেই সংযুক্ত খাল খনন করতেই হবে। তা নাহলে মরিচ্চাপ খনন কোন কাজেই আসবে না।