ঢাকা, শুক্রবার ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬শে পৌষ ১৪৩১

হরিনাকুন্ডুর ইউএনও'র বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি ( ঝিনাইদহ ) : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:২০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুস্মিতা সাহার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। আশ্রায়নের ঘর নির্মানে অনিয়ম, সরকারি বরাদ্দের ২০-১০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মাটি ও বালি বানিজ্য, জাতীয় দিবসের নামে চাঁদা আদায়, সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনসহ নানা অপকর্ম এখন উপজেলার মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।
 
 
জানা যায়, ইউএনও সুস্মিতা সাহা ২০২২ সালের ৯ মার্চ হরিনাকুন্ডুতে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি টিআর, জিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) ও কাজের বিনিময়ে টাকা(কাবিটা) ইত্যাদি প্রকল্পসহ উপজেলা পরিষদের সরকারি বরাদ্দে নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকাশ্য ঘুষ বাণিজ্য করে আসছেন। পাঁচ মাস আগে ৪০ দিনের কর্মসূচির টাকার পার্সেন্টেজের ভাগাভাগি নিয়ে পিআইও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে তাকে প্রকাশ্যে বাকবিতন্ডে জড়াতে দেখা যায়। ৪০ দিনের কর্মসূচীর টাকায় নির্ধারিত পার্সন্টেজ না পাওয়ায়  ইউনও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একবার তালাও লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
 
সুস্মিতা সাহার বিরুদ্ধে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মানে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীন নয় এমন ব্যক্তিকেও ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মানের সব খরচ সরকারের বহন করার কথা থাকলেও  নির্মাণকাজে ভূমিহীনদেরকেও বিভিন্ন উপকরণ দিতে হয়েছে। বালু ও মাটি দিয়ে ঘরের মেঝে ভরাট করে দিতে হয়েছে। শ্রমিকদের খেতে দেওয়াসহ নলকুপ মেরামত ও বিদ্যুৎ সংযোগের টাকাও উপকারভোগীদের বহন করতে হয়েছে। এছাড়াও এসব ঘর নির্মানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। নির্মানের ছয় মাসের মধ্যে অনেক ঘরের মেঝে ও দেওয়ালে ফাটল ধরেছে।
 
ইউএনও সরাসরি ঘর নির্মাণ করায় কাজের মানসহ ঘর নির্মানের কোন বিষয়েই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হস্তক্ষেপ করতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন একাধিক জনপ্রতিনিধি।
 
 
জাতীয় দিবস উদযাপনের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে মোটা অংকের চাদা নেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক কাওসার আলী ও তাঁর গাড়িচালক বাবলুকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে নিকট পাঠিয়ে এই চাদা সংগ্রহ করেন বলে জানা যায়। চাদার টাকার পরিমান ইউএনও নিজেই নির্ধারন করেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিনাকুন্ডুর হাসপাতাল মোড়ের এক ব্যবসায়ী জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর উদযাপনের জন্য ৪০ হাজার টাকা চাদার জন্য ইউএনও তার নিকট কাওসার আলীকে পাঠান। টাকা না দিলে ইউএনও ক্ষতি করতে পারেন-এই ভয়ে তিনি ৪০ হাজার টাকায় কাওসারের হাতে তুলে দেন।
 
অভিযোগ রয়েছে, গ্রামবাসীর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইউএনও উপজেলার তাহেরহুদা গ্রামের ফসলী জমিতে পুকুর কেটে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেন স্হানীয় বালুখোর লাল মিয়াকে। এর জন্য তিনি ঐ বালু ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ৪০ গাড়ি বালি নেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
 
 
উপজেলাজুড়ে ফসলী জমির মাটি কেটে বিক্রি করার একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকলেও তাদের ব্যাপারে রহস্যময় নীরাবতা দেখা গেছে হরিনাকুন্ডু ইউএনও এর। মাটি কাটা বন্ধ করতে তাকে বিভিন্ন সময় ফোন দিলেও তিনি কোন ব্যবস্হা গ্রহন করেননি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে ইউএনও'র সাথে দফারফা কারনই মাটি বিক্রি সিন্ডিকেট অবাধে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
 
 
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বিল-ভাউচার স্বাক্ষর করার জন্য ৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করেন। টিআর-কাবিখাতে উন্নয়নমূলক কাজে ১০% কমিশন গ্রহন করেন। এডিপির টাকায় ভাগ-বাটোয়ারায় অংশ নিয়ে কমিশন গ্রহণ করেন।
 
প্রকল্প পাস ও বিল ছাড়ানোর ক্ষেত্রে ইউএনও সুস্মিতা সাহাকে টাকা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক ঠিকাদার।
 
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সরকারী গাছ কাটার মৌখিক অনুমতি প্রদানসহ সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনেরও অভিযোগ রয়েছে ইউএনও সুস্মিতা সাহার বিরুদ্ধে।
 
এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা জানান, টিআর, জিআর, কাবিখা, এডিপি,এলজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) এগুলিতো ইউএনও অফিসের কাজ না। আর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘর নির্মাণে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে করা হয়েছে। কারও কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়া হয়নি। বালি নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান, আমার অফিস সবসময় স্বচ্ছতা ধরে রাখার চেষ্টা করে থাকে।