জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে গাজাসহ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে হলের নিরাপত্তা কর্মীরা। এ ঘটনায় হলের একটি ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়েছে হল প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৯আগস্ট) দুপুর দুইটা নাগাদ মীর মশাররফ হোসেন হলের 'এ' ব্লকের তৃতীয় তলায় পূর্ববর্তী তথ্যের ভিত্তিতে ক্যান্টিন বয় মোহাম্মাদ আসিফকে হাতেনাতে গাঁজাসহ আটক করে হলের নিরাপত্তা কর্মীরা। এ সময় তার কাছে গাঁজা পাওয়া যায়। নিরাপত্তাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে তাকে হল প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে।
এর আগেও মোহাম্মাদ আসিফের বিরুদ্ধে মীর মশাররফ হোসেন হলে মাদক সরবরাহের অভিযোগ উঠেছিলো এবং তাকে পূর্বেও একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা আরও জানান, টাকার বিনিময়ে দীর্ঘদিন ধরে হলের মাদক সরবরাহের কাজ করে আসছে হলের এই ক্যান্টিন বয় আসিফ।
অভিযুক্ত আসিফের বাবা, হল ক্যান্টিনের পরিচালক উজ্জ্বল বলেন, আমি ছেলেকে সময় দিতে পারি না, ক্যান্টিনের কর্মচারী নাই, আমি আর ওর মা সারাদিন কাজ করি, যার ফলে ছেলে খারাপ সংস্পর্শে বখে গেছে।
মাদকসেবী ও আসিফের নিয়মিত ক্রেতা ভূতত্ত্ব বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শিহাদকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে নিয়মিত মাদক সেবনের কথা স্বীকার করে ও মাদকসেবন ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানায়।
আসিফের স্বীকারোক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় লেকু ও পার্শ্ববর্তী এলাকা গেরুয়া এলাকায় খান মাদক সাপ্লাই দেয় বলে জানা যায়। হলের মাদক কারবার সম্পর্কে আসিফ বলে, ‘হলে আগে থেকেই মাদক দ্রব্য বিক্রি করা হতো। আগে মাদক কিনত হলের পলিটিক্সের সাথে যুক্ত সিনিয়র-জুনিয়র সবাই। বিভিন্ন সময় আসরের জন্য গাজা বিক্রি করা হতো হলের এবং হলের বাইরের শিক্ষার্থীদের কাছে। পূর্বে ভাইরা আমাকে টাকার বিনিময়ে মাদক আনতে বলত। তবে পরবর্তীতে আমি নিজেই মাদক বিক্রি শুরু করি।’
নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা শরীফুল জিন্নাহ বলেন, হল প্রশাসন আমাদের জানালে আমরা তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসি। সে আমাদের কাছে মাদক বিক্রির কথা স্বীকার করলে আমরা তার মুচলেকা নিয়ে রাখি। সে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাকে আমরা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। পরিবারকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে তাকে পুনরায় এ ধরনের কাজে জড়িত পাওয়া গেলে পুলিশে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, মাদকের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করবো। শুধু চুনোপুঁটিদের নয়, আমরা মাদকের মূল হোতাদের ধরতে চাই। যারা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদেরকে হলে রেখে হলের পরিবেশ নষ্ট হতে দেবো না আমরা। এ ব্যাপারে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আমরা একসাথে বসে সিদ্ধান্ত নেব। আসিফকে আমরা ইতমধ্যেই নিরাপত্তা শাখায় হস্তান্তর করেছি। তার কাছে থেকে আমরা মাদকাসক্ত কিছু শিক্ষার্থীদের নাম পেয়েছি। আগামী রবিবার আমরা তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিব।
উল্লেখ্য, এর পূর্বেও মীর মশাররফ হোসেন হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির হোসেন আসিফকে মাদকসহ ধরেন। এসময় সে আর হলে আসবে না এ মর্মে তার বাবাকে ক্যান্টিন চালু রাখতে দেয়া হয়৷ তবে কিছুদিন পরই সে হলে আসে এবং এ ব্যবসা পুনরায় শুরু করে।