আইন অনুয়ায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের ১২টি ইটভাটায় অবৈধভাবে জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি লিখিতভাবে তালিকা দিয়ে এসব ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন। অথচ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই স্থানীয় প্রশাসনের।
ইটভাটা মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, এবার ঘাটাইল উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৫৩টি। এর মধ্যে সচল, লিটন, নাঈম, সততা, কেএসবি, বিশাল, কনক, মিশাল, স্বর্ণ-১, স্বর্ণা-২, আরএসএম ও তিনতারা নামে ১২টি ইটভাটায় প্রকাশ্যে ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করছে। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইটভাটা মালিক সমিতি উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে দাবী জানিয়েছেন। এছাড়া বাকি ইটভাটার মালিকরা কেউ কেউ কয়লা দিয়ে ইট পোড়লেও অনেকেই কয়লার আড়ালে কাঠ পোড়াচ্ছেন। আবার অধিকাংশ ইটভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ভাটা মালিকদের দাবী উচ্চ আদালতে রিট করে চলছে এসব ইটভাটা। অথাৎ কারো লাইসেন্স নেই, কারো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই, কেউ কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন, কেউ সংরক্ষিত বনের পাশে, ফসলি জমিতে এবং বিদ্যালয়ে পাশে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। মালিকরা কোন আইন মানছেন না তবুও চলছে ইটভাটা।
সরেজমিনে উপজেলার ঘাটাইল সদর ইউনিয়নে অবস্থিত সচল ও কেএসবি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ইট পোড়ানোর জন্য জ্বালানি কাঠ স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ইট পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত ইটভাটা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ভাটায় ইট পোড়াতে ২৪ ঘন্টায় প্রায় দুইশত মণ জ্বালানি কাঠের দরকার হয়। আর এসব কাঠের অধিকাংশই সংগ্রহ করা হচ্ছে সংরক্ষিত বন থেকে। প্রতি মে.টন কয়লা ক্রয় করতে খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে জ্বালানি কাঠে খরচ টন প্রতি মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকা। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সাশ্রয়ী হওয়ার কারণেই ভাটা মালিকরা কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে আগ্রহী বেশী।
ঘাটাইলে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। বনবিভাগের ভূমিতে রয়েছে সামাজিক ও সংরক্ষিত বনের প্রচুর গাছ। ইটভাটা মৌসুমে অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা প্রতিরাতেই ট্রাক বোঝাই করে বনের কাঠ বিক্রি করে ইটের ভাটায়। বনের অধিবাসী ও পরিবেশবিদদের শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংশ হয়ে যাবে বন।
ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে এমন কোন তথ্য তার কাছে নেই। তথ্য পেলে সংশ্লিষ্ট ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান সরকার জানান, সকল ইটভাটা মালিকদের কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা নিষেধ অমান্য করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে সেসব ইটভাটার তালিকা উপজেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। এছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালালি কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদন্ড এবং অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। প্রশাসন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, আইন অনুযায়ী জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কোন সুযোগ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে তালিকা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ হোসেন বলেন, ইটভাটা মালিক সমিতি জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো ইটভাটার একটি তালিকা দিয়েছেন। দ্রুতই এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।