যশোরের শার্শা উপজেলার পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব চঞ্চল কুমার খাঁ এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে জন্মনিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে দেয়া এবং টাকা কম দিলে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শার্শা উপজেলার পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব চঞ্চল কুমার খাঁ ২০১২ সাল থেকে ১০ বছর পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এক স্থানে থাকায় তিনি নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
ইউনিয়নের দক্ষিণ বারপোতা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী সুমি খাতুন (৩০) বলেন, আমার মেয়ের জন্য জন্মনিবন্ধন নিতে সচিব আমার কাছে প্রথমেই ৬০০ টাকা দাবি করেন। ২০০ টাকা আমি অগ্রীম দেই। বাকি টাকার জন্য এখনো আমি নিবন্ধন নিতে পারেনি।
বারোপোতা গ্রামের শাহাদত হোসেন (৫০) বলেন, যেকোন সার্টিফিকেট আনতে গেলে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা চাচ্ছে সচিব। আমরা দেব কোথা থেকে, আমরা গরীব মানুষ। মাঠে মজুরী খেটে খাই। জমি-জায়গা নেই। সরকারের কাছে আমাদের দাবি আগে যেভাবে নিত ৫০ টাকা করে সেই ভাবে নিক।
একই গ্রামের রুস্তম আলীর পুত্র আকরাম আলী (৪৫) বলেন, পুটখালীবাসীর অনেকের উপর জুলুম করে এই সচিব। উনাকে কিছু বললে হুমকি দিয় বলেন আপনাদের কে আছে নিয়ে আসেন তার সাথে বোঝাপড়া করবো। জন্ম নিবন্ধন আনতে গেলে দূর্ব্যবহার করেন। অফিস থেকে বের হয়ে চলে যেতে বলেন।
পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব চঞ্চল কুমার খাঁ বলেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ কাজের সাথে আমি নিজে কোন ভাবে সম্পৃক্ত না। এই কাজটা উদ্যোক্তারা করেন। আমার কাজটা হচ্ছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে সেটাকে অনুমোদন দেওয়া। সচিবকে এ ইউনিয়নের বিভিন্ন নাগরিকের কাছ থেকে ২শ টাকা থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করতে নেওয়া হয়। অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া না হলে কাগজপত্র ছুড়ে ফেলা হয় এ ধরনের প্রশ্ন করলে সচিব চঞ্চল কুমার খাঁ বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না, আসলে এ রকম কোন ঘটনা আমার সামনে ঘটেনি।
সচিবের পাশে থাকা উদ্যোক্তা রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসমত উল্লাহ (২২) নামে এক যুবক বলেন, আমরা এলাকার রাজনীতি করি। আমার একটা ছোট ভাই এর জন্ম নিবন্ধন এর পিতার নাম সংশোধন করতে গেলে ৩শ টাকা দাবি করেন, তখন আমি তাকে বলি সরকার অ্যামাদের গেজেটভুক্ত করে দিয়েছে একটু কম নেন। তখন তিনি আমাকে বলেন না কম নেওয়া যাবে না। আমি বলি সে স্টুডেন্ট মানুষ একটু কম করে নেন। একথা শুনে উদ্যোক্তা রুবেল বলেন, বেশি কথা বললে কাগজ ফেলে রাখা হবে, তারিখের পর তারিখ দেওয়া হবে।
পুটখালি ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার সরদার বলেন, এর আগে যে চেয়ারম্যান ছিলো তখন কি করেছে বা হয়েছে জানিনা। আমি নতুন চেয়ারম্যান। এখন থেকে আশা করি কোন ধরনের অনিয়ম হবে না। সেই সুযোগ আমি কাউকে দেব না।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাদের জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। কয়েকটা ইউনিয়ন থেকে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধনে মানুষকে হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের খবর পেয়েছি। এই বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা উপজেলা ট্যাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে আমি সকল ইউপি সচিবকে জানিয়ে দিয়েছি সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত কোন টাকা যদি কেউ নিয়ে থাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।