ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

খাবার পানি সংকট,পয়নিষ্কাশনসন নানা সমস্যায় জর্জরিত মিঠামইনের হরিদাসরা

আশরাফুল ইসলাম তুষার, কিশোরগঞ্জ : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২২ জানুয়ারী ২০২২ ০৬:০৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

পেশা বদল করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না ররিদাসদের।পানি সংকট,পয়নিস্কাশনসহ নানা সমস্যায় নাকাল মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের রবিদাস পল্লীর রবিদাসরা। আদি পেশা পুরোনো জুতো সেলাই হলেও এ পেশায় তারা ঠিকে থাকতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে জুতো সেলাই করে প্রতিদিন এক দেড়শো টাকা দিয়ে সংসার চলে না বলে যে যেটা ভালো লাগে সেই পেশায় জড়িত হয়েছে। কেউ নাপিত পেশা,কেউবা কৃষি শ্রমিক, আবার কেউ জুতোর কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে,মিঠামইন উপজেলার কাটখাল বাজারের পাশ্ববর্তী রবিদাস পল্লীতে ৭-৮টি পরিবার বসবাস করে। তাদের আদি নিবাস ভারতের কোন প্রদেশেও হলে দীর্ঘ শতক ধরে এদেশে বসবাস করছে। তাদের মাতৃভাষা নাগরী বা ভোজপুরি হলেও এদেশের বাংলাভাষীদের থেকে বাংলা ভাষা ভালোভাবেই রপ্ত করেছে। নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদানের ক্ষেত্রে তারা তাদের মাতৃভাষা নাগরী অথবা ভোজপুরি ভাষা ব্যবহার করে।নব্বই উর্দ্ধ শ্যামলাল রবিদাস বলেন,সংগ্রামের আগে আমাদের বাড়ি ছিল ইটনা উপজেলায়। সেখানের বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় একাত্তর সালের পরে কাটখাল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে সবাই মিলে একখন্ড জমি কেনে বাড়ি করেছি। পুরোনো জুতোর কাজ নেই তাই আমাদের ছেলেরা কেউ সেলুনের কাজ কেউবা কৃষি শ্রমিকের কাজ করছে। নিজস্ব ফসলি জমি নেই বিধায় অন্যের সংস্থানে আবার কেউ কেউ আদি বর্গা নিয়ে ধানী জমিও চাষ করি। যুবক ভজন রবিদাস (৩২) বলেন, সারাদিনে জুতো সেলাই করে মাত্র এক থেকে দেড়শো পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না তাই পেশা বদল করেছি। আমাদের পল্লীতে খাবার পানি মহা সংকট। কোন গভীর নলকূপ নেই। খাবার পানি অন্যান্য মুসলমান বাড়ি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়াও প্রায় বাড়িতে শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েলকে পানি উঠে না তাই আমাদের অগত্যা নদীর পানি খেতে হবে। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে ফুটানো ছাড়াই নদীর পানি খাওয়ায় আমাদের পরিনতি। পয়নিস্কাশন (টয়লেট) নেই অনেকের। তারা রাতের অন্ধকারে প্রাকৃতিক কাজটি সেরে নেয়। মিনতি রবিদাস (৫৫) ৩০হাজার টাকা সুদের উপর নিয়ে একটি টয়লেট দিয়েছেন। এর সুদ প্রতি মাসে মাসে গুনতে হচ্ছে। এখন আর দিতে পারছেন না সুদ। আসলতো দূরের কথা। সুজন রবিদাস (৪২) তার টিউবওয়েলও নেই টয়লেটও নেই। দিনের বেলায়া অন্যের টয়লেটে প্রাকৃতিক কাজটি সাড়ে। আর রাতে বেলায় খোলা জায়গায় তাদের এ কাজটি সাড়তে হয়। ক্ষুদ্রজন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি কোন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে। একবার উপজেলা সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে ট্রেনিং দিয়ে কিছু ভাতা পেয়েছিলাম। ভিটেবাড়ি নিয়েও সমস্যা চলছে। মাঠের আরেকটি জমি জোর পূর্বক দখল করে রেখেছে একটি প্রভাবশালী মহল। দখলে যেতে দেয় না। স্থানীয়ভাবে কোন বিচার পাচ্ছি না। অনেকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছি কেউ এর সুরাহা দেয়নি।এরই মাঝে আমাদের নিজ প্রচেষ্ঠায় আশার আলো নিরাশায় দোল খাচ্ছে। আমাদের পাড়ার সুভাস রবিদাস,শ্যামলী রবিদাস এবার এসএসসি পাশ করেছে। তাদেরকে ভালো কলেজে ভর্তি করাবো সেই সঙ্গতি নেই। মৃত রঙ্গলাল রবিদাসের পুত্র হৃদয় রবিদাস একাদশ শ্রেণীতে পড়ে মিঠামইনের একটি কলেজে। টাকার অভাবে কষ্ট হচ্ছে তার পড়া-লেখার খরচ যোগাতে। রবিদাস বলে অনেকে নিগ্রহ করে। কোন বাড়িতে লজিং শিক্ষক হিসেবে রাখছে না বলে তার খাবারের পয়সাও দিতে হয়।বর্তমান জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের অনেক না বলা কথা আছে তার মধ্যে আমাদের খাবার পানি সংকট নিরসনে একটি গভীর নলকূপ,স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মান ও আমাদের পল্লীর যারা লেখাপড়া করছে তাদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টি দিলেই আমরা উপকৃত হবো।