ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১

টাঙ্গাইলে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

হাসান সিকদার,টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৪:৪০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। চলতি মৌসুমে ভাটার জন্য ইট পুড়াতে দিনরাত নির্বিচারে আবাদি জমি বিনষ্ট করে ও জ্বালানি হিসেবে বন উজার করে সংগ্রহ করা হচ্ছে মূল্যবান বনজ সম্পদ। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের চোখের সামনে এসব ইটভাটা চালানো হলেও কার্যকরী কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না তারা। স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু চক্র ও বিভিন্ন দপ্তরে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে ইটভাটা গুলো। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। এর ফলে প্রতিবছর নানা সমস্যায় পড়ছে কৃষকেরা। এতে পরিবেশের ক্ষতি বলছে গবেষকরা । 

জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় নামে বেনামে গড়ে তুলা হয়েছে ইট ভাটা গুলো। ভাটায় পরিবেশ বান্ধব চিমনি থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা অনেক ভাটায়। স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে ছোট্ট পরিসরে ভাটা স্থাপন করলেও পরবর্তীতে আবাদি জমি দখল করে ভাটার পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। জেলায় ২১৭টি ইট ভাটা থাকলেও বর্তমানে ইট পুড়ানোর কাজ করছে ১৮৪টি। বাকিগুলো নানা কারণে বন্ধ থাকলেও মৌসুমের শুরুতেই চালু করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে ১ কিলোমিটারের মধ্যে পঞ্চাশটি পরিবার থাকলে সেখানে কোন ভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু জেলায় যে সকল ইট ভাটা আছে তার অধিকাংশই আবাদি জমি এবং জনবসতির পাশেই। ব্যাঙের ছাতার মত ইট ভাটা গড়ে ওঠায় আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের সমস্যা। পরিবেশের উপর পরছে বিরূপ প্রভাব ফলে সব ধরনের ফলন দিন দিন কমে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল জেলায় ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬শত ৪৭ হেক্টর আবাদি জমি থাকলেও প্রতিবছর ৪শ থেকে ৬শ একর জমি নষ্ট হচ্ছে ইটভাটার কারণে। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এক সময়। 

কৃষক মালেক মিয়া বলেন, জমিতে সরিষা আবাধ করছিলাম পরে ইট ভাটার ধোয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। যদি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ইট ভাটা তৈরি করা হতো তাহলে ফসল নষ্ট হবে না। সানজিদা নামে ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রী বলেন, স্কুলে যাতায়াতের সময় ইট ভাটার ট্রাক যাতায়াত করে পরে এর কারণে  ধুলাবালিতে শরীর ও কাপড় নষ্ট হয়। ধোয়ার কারণে মাঝে মাঝে শরীর অসুস্থ হয়ে পরে ।

বন্ধন ইট ভাটার মালিক খন্দকার মাতিন বলেন, কয়লার দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণেই আমরা  লাকড়ি দিয়ে ইট পুরাচ্ছি । এদিকে শ্রমিকরা বলছে, ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ইট পুড়ানো যায় আর এসময় কয়লার দাম বেশি থাকার কারনেই মালিকরা লাকড়ি দিয়ে ইট পুড়াচ্ছে । 

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান এবং রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রফেসর ডঃ মাহবুবুল হক বলেন,  আমাদের দেশে আইন মেনে কেউ ইটভাটা করছে না। ফলে পরিবেশ ব্যাপক হারে দূষণ হওয়ার পাশাপাশি আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার সূত্রধর বলেন, আমরা অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। গত কয়েকদিনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে ।