গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত তিন সপ্তাহে ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে গর্ভবতী আরও ৯ জেব্রা। জেব্রাগুলোর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি পার্ক কর্তৃপক্ষে।
খাদ্যে বিষক্রিয়া, বিষ প্রয়োগ, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ নাকি অজ্ঞাত কোনো কারণ, তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য মঙ্গলবার পার্ক অভ্যন্তরে বিশেষজ্ঞদের বৈঠক বসবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির জানান, জেব্রাগুলোর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ প্রাণী চিকিৎসক, গবেষক ও পার্কসংশ্লিষ্ট লোকজনের সমন্বয় বৈঠক বসবে আজ।
পার্কসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকেই হঠাৎ একের পর এক মারা যাচ্ছে জেব্রা। ২৪ জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত মোট ৯টি জেব্রা মারা যায়। পার্কটিতে ৩১টি জেব্রা ছিল। ৯টির মৃত্যুর পর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২টিতে।
প্রথম দিন জেব্রা মারা যাওয়ার পর মরদেহের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ( আইইডিসিআর) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল বিচ্ছিন্নভাবে এসেছে।
সূত্র জানায়, অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু হলেও একই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে জেব্রার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এভাবে হঠাৎ ৯টি জেব্রার মৃত্যুকে অনেকেই রহস্যজনক মনে করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দীর্ঘ দিন ধরে জেব্রার পাল সমৃদ্ধ হচ্ছিল। কিছু দিন পর পরই জেব্রার পালে নতুন নতুন অতিথি আসছিল। ক্রমাগত এদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এখান থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় কিছু জেব্রা পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন মৃত্যু পার্ক কর্তৃপক্ষ শঙ্কিত।
পার্ক সূত্র জানায়, জেব্রার খাবার মূলত বিভিন্ন ধরনের ঘাস। সাফারি পার্কে জেব্রাকে ঘাস সরবরাহ করে মাহবুব এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। চারণভূমির ঘাস খাওয়ার পাশাপাশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘাস এনে এদের খাওয়ানো হয়।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, সাফারি পার্কের চারণভূমির ঘাস ও মাটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
৯ জেব্রার মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার এ বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞরা বৈঠক করবেন। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে পরীক্ষার পর পাওয়া ফল বিশ্লেষণ করা হবে। এর পর জানা যাবে জেব্রার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। তবে পার্কে থাকা গর্ভবতী ৯টি জেব্রা ঝুঁকিতে রয়েছে। গর্ভবতী জেব্রাগুলোকে বিশেষভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে।
সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেন, মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান চলছে। মৃত জেব্রাদের ময়নাতদন্ত হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আইসিডিডিআরবি, ঢাকার কিউসি ল্যাবসহ বিভিন্ন জায়গায় নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাফারি পার্কের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই। বাইরে থেকে কেউ এসে বিষ প্রয়োগ করবে, এমন ঘটনা ঘটার কথা না। তবু আমরা এগুলো মাথায় রেখেই আজকের বৈঠকে বসছি। সব কিছু রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠার পর দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাঘ, সাদা বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, হরিণ, ক্যাঙ্গারু, কালো ভাল্লুক, সাম্বার, গয়াল, হাতিসহ প্রচুর প্রাণী ও পাখি আনা হয়। তবে গত ৮ বছরে বাঘ, জিরাফ, ক্যাঙ্গারু, জেব্রাসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছে দুর্লভ কিছু পাখি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার ও দেশীয় বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার প্রাণী ও পাখির বেশিরভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এসেছে।
সবচেয়ে বড় জব্দ প্রাণীর চালান এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। তখন যশোরে চোরাকারবারির কাছ থেকে জব্দ আটটি জেব্রা একসঙ্গে আনা হয়েছিল সাফারি পার্কে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ও রোগাক্রান্ত হয়ে গত ৮ বছরে বেশ কয়েকটি জিরাফের মৃত্যু হয়।