কৃষি অফিসের পরামর্শে ২০১৪ সালে আট শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ শুরু করে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সোহেল রানা। চাষের শুরুতেই প্রথমবার তিন হাজার টাকা খরচ করে মোট ৮ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন তিনি।
অন্যদিকে, নতুন ভাবে টিউলিপ ফুল চাষে করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন পবা উপজেলার হাসান আল সাদী। তিনি ৮ বিঘা জমিতে নানান প্রজাতির ফুলের নার্সারি করেছেন। শুধু রানা আর সাদী নয়’ তাদের মতো এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে নিজেদের ভাগ্যে পরিবর্তন করছেন রাজশাহীর যুবকরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ‘বাণিজ্যিক ভাবে রাজশাহীতে মোট ১০ হেক্টোর জমিতে চাষ হচ্ছে গ্লাডিওলাস, গাঁদা, গোলাপ ও টিউলিপ ফুল। যার মধ্যে ৪ হেক্টোর জমিতে চাষ হচ্ছে গ্লাডিওলাস ফুল। আর ৬ হেক্টোর জমিতে অন্য ফুল গুলো চাষ হচ্ছে। এই বছর থেকে নতুন ভাবে রাজশাহীর পবায় চাষ করছেন টিউলিপ ফুল । শীতপ্রধান দেশে ফুলটি হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এই ফুলের চাষের সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
পবা উপজেলার ফুল চাষী হাসান আল সাদী জানান,‘আমি বাড়ির পাশে গার্ডেনের আম বাগানেই এই বিদেশী প্রজাতির এই ফুল চাষ করছি। টিউলিপ ছাড়াও বছরের ১২ মাসই পাওয়া যাবে কোন না কোন প্রজাতির ফুল। আমার এখানে নানা প্রজাতির ফুলের সাথে টিউলিপ চাষ ভালো হচ্ছে। বাজারে এই ফুলের দামও ভালো পাওয়া যায়’।
তিনি আরো বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের সর্বত্রই আমের বাগানে রয়েছে। আম বাগানের নিচের জায়গাগুলো সারা বছর অব্যবহৃত থাকে। এই পতিত জায়গাগুলোকে কাজে লাগানোর ভাবনা থেকেই আমার এমন চিন্তা আসে। আর সেই অনুযায়ীই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন ভালো ফলাফল পাচ্ছি। ফুল আসাও শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে প্রদর্শনীর পাশাপাশি ফুল ও চারা বিক্রি করতে পারবো’।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গ্লাডিওলাস ফুল চাষী সোহেল রানা জানান,‘আমি ২০১৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়াশনা শেষ করেছি। এখন এই কাজে যুক্ত আছি। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে এ ফুলের চারা রোপণ করতে হয়।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ফলন পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ফুলের স্টিক ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমি ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারী প্রতিটি স্টিক ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করছি’।
তিনি আরো জানান,‘ ইতোমধ্যে ৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি। জমিতে আরও ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফুল রয়েছে। আমার এখানে থেকে রাজশাহী, নাটোর, ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন মানুষ ফুল পাইকারী কিনে নেয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচারক (উদ্যান) উত্তম কুমার কবিরাজ জানান,‘কয়েক বছর থেকে বাণিজ্যিক ভাবে রাজশাহীতে ফুল চাষ হচ্ছে। বেশির ভাগ ফুলের বীজ ও সামগ্রী যশোর থেকে আনছে কৃষকরা।এছাড়া
ফুল বিক্রির পর চাষিরা বীজও বিক্রি করতে পারবেন। আট শতক জমি থেকে অন্তত ৩০ হাজার টাকার চারা বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। রাজশাহীতে ১০ হেক্টোর জমিতে ফুল চাষ করে এখন বছরে ৪০ লক্ষ টাকার আয় হচ্ছে যা বাড়ানো সম্ভব’।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে টিউলিপ ফুল চাষ এই প্রথম। আর গ্লাডিওলাস কয়েক বছর থেকেই চাষ হচ্ছে। পতিত জমি ও অন্য ফসলের পাশাপাশি ফুলের চাষ করে অনেক মানুষ বাড়তি আয় করছে। রাজশাহীতেও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের সম্ভবনা রয়েছে’।