হামলা, ভাঙচুর ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরসহ ৩৫ জনের নামে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে মামলা করেছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুদ্দিন সাবু।
ঘটনার দীর্ঘ ১১ বছর বৃহস্পতিবার দুপুরে পর সাহাবুদ্দিন সাবু আদালতে হাজির হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক এডিজি মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মিজানুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু, সাবেক মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া প্রমুখ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়, ঘটনার দিন সাহাবুদ্দিন সাবুকে গুলি করে আহত করা ছাড়াও র্যাবের গুলিতে বিএনপি কর্মী শিহাব ও মাহবুব এবং যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে জুয়েলের মরদেহ গুম করা হয়। এছাড়া র্যাবের গুলিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বহু নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এবং পঙ্গুত্ব বরণ করে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহম্মদ ফেরদাউস মানিক জানান, এতোদিন তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর তিনি বিচারের জন্য আদালতের দারস্থ হয়েছেন। আদালত বাদী এবং আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে এজাহারটি সদর থানাকে এফআইআর হিসেবে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী দীর্ঘদিন পর ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে মামলাটি করতে পেরেছেন। আশা করি তদন্ত করে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী বিএনপি নেতা সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ঘটনার সময় তিনি জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার দেশব্যাপী বিএনপির আন্দোলনকে দমন করার জন্য পরিকল্পনা করে। তারই অংশ হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ভোরে তখনকার র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাইদের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা শহরের উত্তর তেমুহনীতে আমার বাসভবনে হানা দেয়। আমি প্রাণভয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেত চাইলে সাবেক পৌর মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু ও তার ভাই শিবলুসহ সন্ত্রাসীরা আমাকে অস্ত্র প্রদর্শন করে। এসময় আমি পুনরায় ঘরে ঢুকে পড়ি।
র্যাব আমার দরজা নক করে আমার পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়ার পর র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাইদ পিস্তল বের করে আমার ডান পায়ের উরুতে গুলি করে। তারা আমার বাসভবনে থাকা কোটি টাকা মূল্যের তিনটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে তাদের পিক-আপ ভ্যানে তুলে সদর থানায় নিয়ে পুলিশে সোপর্দ করতে চায়। কিন্তু আমার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পুলিশ আমাকে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে বলে। তারা আমাকে হাসপাতালে না নিয়ে থানার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে আমি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। শেখ হাসিনা আমাদেরকে হত্যা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এতো বছর এ মামলা দায়ের করতে পারিনি। র্যাবের ভয়ে দেশ চেয়ে বিদেশে গিয়ে আত্মগোপন করতে হয়েছে। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আজকে আমি মামলা করেছি। আমি শেখ হাসিনাসহ আসামিদের ফাঁসি চাই, বিচার চাই।
বায়ান্ন/একে