সালে কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় নির্মাণের জন্য লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার হাজিগঞ্জ বাজারস্থ সহজ-সরল তৎকালীন সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক (৮০) ৩০ শতক জমি দানপত্র করেন। কিন্তু একটি জালিয়াতি চক্র সহজ-সরল সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই ইউপি সদস্যর নিকট থেকে দানপত্র দলিলে ৭১.৫ শতক জমি লেখে নেয়া হয়। পরর্বতীতে সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় নির্মাণ হয়নি। তাই তিনি অবশিষ্ট জমি ফিরত পেতে জেলা আদালত, লালমনিরহাট থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এ মামলা।
২০০০ সাল থেকে দীঘ ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও ৭টি মামলা হলেও সবকটির রায় জমিদাতার আবু বক্কর সিদ্দিকের পক্ষে। তবুও আজ পর্যন্ত জমিদাতা তার জমি ফিরত বা দখলে নিতে পারছেন না। উক্ত নালিশী জমি স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা দখলে নিয়ে দোকান-পাট নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। দফায় দফায় আদালতের রায় কার্যকর না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ কোর্ট ফি বিশ টাকা আবেদন সংযুক্ত একটি পত্র জেলা প্রশাসকের নিকট ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আত্মহত্যার আবেদন করেন। সহজ-সরল তৎকালীন সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের ছোট কমলাবাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র। দীঘ ২০ বছরের ৭টি মামলার জট টানতে টানতে নিঃস্ব হয়ে সর্বশেষ ভরসাস্থলে গতকাল সোমবার (৭ জানুয়ারী) দুপুরে প্রেসক্লাব, লালমনিরহাটে এসে অশ্রুসিক্ত নয়নে আবু বক্কর সিদ্দিক এসব বিষয় সাংবাদিকদের জানান। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, অসহায় বৃদ্ধ নালিশী ৭১.৫ শতক জমি দানপত্রের দলিল বাতিল সত্বের মামলা করেন। আদিতমারী সহকারী জজ আদালতে অন্য নং- ১/২০০০। উক্ত মামলায় রায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হলে আদালতের নির্দেশক্রমে মূল দানপত্র দলিল ও সাব রেজিঃ অফিস লালমনিরহাট এর উক্ত দানপত্র দলিলের ভলিওম সংশোধন করা হয়। পরর্বতীতে জেলা প্রশাসক ১/২০০০ নং- মামলার রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল নং- ৮৮/২০০০ দায়ের করিলে আদালত উক্ত আপীল খারিজ করে পূর্বের দেয়া রায় ডিক্রি বহাল রাখেন। জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন নং- ২৯৫৬/২০০২ দায়ের করেন।
হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় নালিশী জমি স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা বেদখল করে নেন। মহামান্য হাইকোর্ট ৪১.৫ শতক জমির সীমানা ও চৌহদ্দী বর্ণনা করে পুনরায় রায় লেখার নির্দেশ দেন জেলা যুগ্ন জজ ২য় আদালত লালমনিরহাটে রিমান্ডে প্রেরন করলে জেলা যুগ্ন জজ ২য় আদালত গত-১৬/০৪/২০১৫ইং তারিখে ৪১.৫ শতক জমির সীমানা ও চৌহদ্দী বর্ণনা করেন পুনরায়। রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। উক্ত রায় প্রাপ্ত জমি দখলে পাওয়ার জন্য ৩০/০১/২০১৯ইং তারিখে জেলা যুগ্ন জজ- ১ম আদালতে অবৈধ দখলদারদের বিবাদী করে খাস দখল মামলা ৩২/২০১৫ইং দায়ের করা হয়। এতে আদালত অবৈধ দখলদারদেও উচ্ছেদের রায় দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক ২য় দফায় জেলা জজ আদালতে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করেন। যার নং- ৩১/২০১৯ এবং অন্য বিবাদীরা ৩৬/২০১৮ আপীল করলে জেলা জজ গত ২২/১১/২০২১ আপীল ২টি খারিজ করে দেন। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের রায় ডিক্রি বহাল রাখেন আদালত।নালিশী জমি সিএস, এসএ, সর্বশেষ বিআরএস রেকর্ড ব্যক্তি মালিকানার নামে চুড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। নালিশী জমি নিয়ে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন নং- ২৯৫৬/২০০২ বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মোকছেদ আলী ও তাহার ভাই মোকলেছুর রহমানকে এক সণা লাইসেন্স দেন। যা দুই ভাই মিলে ২০ শতক জায়গা দখলে নিয়েছেন। আবার ৩২/২০১৫ খাস দখল মামলায় সরকার পক্ষের জবাবে ১/২০০০ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক দায়ের কৃত অন্য আপীল ৮৮/২০০০, সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক কর্তৃক দায়ের কৃত হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন ২৯৫৬/২০০২ মামলার বিষয় গোপন করে এবং নালিশী জমির মালিক না থাকা ও খাস খতিয়ান ভূক্ত করা হয়েছে।
যা আদিতমারী থানাধীন জে,এল নং-৭৭, বড় কমলাবাড়ী মৌজার নালিশী সি এস নং- ৩০২ এস এ নং- ৩১৯, খতিয়ানের ১৬৬৫ নং দাগে ১.৪৩ একর মধ্যে আরজির হাত নকশায় চিহ্নিত .৪১ একর জমির দখল। বাদীর অনুকূলে অর্পণ করার জন্য বিবাদীপক্ষকে নির্দেশ দেয় আদালত। জমিদাতা আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি একজন নীরহ মানুষ হিসেবে প্রতি হয়রানি আর ষড়যন্ত্র করছেন। এমতাবস্থায়, আমি আদালত থেকে ৭টি রায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হয়েও জমি ফেরত পাচ্ছি না। উক্ত নালিশী ৪১.৫ শতক জমি সরকারী সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ পূর্বক দখল ও নামজারীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও আদিতমারী সহকারী ভুমি কমিশনারের নিকট আবেদন করেছি। দীঘ ২০ বছরের মামলার জট টানতে টানতে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। কেই আমার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। অন্যথায় আমি আমার পরিবারে যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে সে জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা দায়ী থাকবেন।
আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই আমি আইনের মাধ্যমে সুবিচার চান।আদিতমারী ভাদাই ইউনিয়ন ভুমি অফিসের ইনচার্জ মো. মমিনুল করিম চৌধূরী বলেন, আদালতে মামলা জটিলতার কারণে বর্তমান ওই জমির খাজনা আদায় করা হচ্ছে না। তবে যারা ওই জমি লিজ গ্রহীতা তারা ১৪২১ (বাংলা) সাল পর্যন্ত লিজের টাকা পরিশোধ করেছেন।এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর আহমেদ- এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার মুঠোফোন ধরেননি, তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।