ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

৩০ বছর ধরে বাদাম বেচে সংসার চলায় হিলির বাবুল মিয়া

মোঃ লুৎফর রহমান,হিলি( দিনাজপুর )প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৪:৩০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

জীবিকার তাগিদে মানুষ বেছে নেয় নানান পেশা, সেটি ছোট কিংবা বড় হউক, যার যেমন সমর্থন তার তেমন কর্ম। এমনি একটি ছোট পেশা বাদাম বিক্রি বেছে নিয়েছিলেন দিনাজপুর জেলার হিলির বিশাপাড়া গ্রামের ৬৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবুল মিয়া। আর এই ব্যবসা করে তিন ছেলে-মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন তিনি। তবে ভাগ্যে এখনও জোটেনি বাবুল মিয়ার বয়স্ক ভাতার কার্ড।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হিলি জিরোপয়েন্টের চেকপোস্টে রেললাইনের পাশে দেখা যায়, গলায় বাদামের ডালা ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম বিক্রি করছেন বাবুল মিয়া। প্রায়  ৩০ বছর যাবৎ এই ব্যবসা করে আসছেন তিনি। সংসারে তার বাড়তি কোন আয় নেই, নেই কোন আবাদি জমি। বাবুল মিয়ার এক ছেলে দুই মেয়ে, মেয়েদের মাধ্যমিক পাস করেই বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেকে অনেক কষ্ট ও আশা করে মাস্টার্স পাস করিয়েছেন এই বাদাম ব্যবসায়ী।

প্রতিদিন সকাল হলেই বাড়ি থেকে গরম ভাত খেয়ে গ্রাম থেকে বাদামের ডালা গলায় ঝুলিয়ে হিলি শহর মুখি হন তিনি। ৫ থেকে ৬ কেজি বাদাম তার স্ত্রীসহ নিজেই ভেজে গরম গরম বাদাম নিয়ে শহরে  প্রবেশ  করেন। হিলি শহরের  অলিগলি ঘুরে তার বাদাম বিক্রি। সারাদিনে প্রায় তার ডালার সব বাদাম বিক্রি হয়ে যায়। এতে তার লাভ হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। হিলিতে এই বাদাম বিক্রেতা একটা পরিচিত মুখ, তার ভাজা বাদামের স্বাদ সবার মুখে মুখে।

হিলি চেকপোস্টে বাবুল মিয়ার নিকট বাদাম কিনতে আসা একজন ক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, এই বয়স্ক চাচার বাদাম আমি প্রতিদিন কিনে খাই, তার বাদাম ভাজাটা ভাল এবং কড়া হয়। ২০ টাকা ১০০ গ্রামের  দাম, বাদামের সাথে সুস্বাদু লবণ দেয়, খেতে ভারি মজা।

বাদাম ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, বাদামের লাভ দিয়ে আমার সংসার চলে, অন্য কোন কর্ম জানি না। ৩০ বছর ধরে হিলিতে ব্যবসা করে আসছি, এই ব্যবসায় আমার হালগরু। ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছে, ছেলের একটা ভাল চাকরি হলে আমার আর কোন অভাব থাকবে না। আজ আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে, যদি একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড হতো তাহলে অনেক উপকার হতো।

এবিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার ২ নং বোয়ালদাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের বিশাপাড়া গ্রামের বাদাম ব্যবসায়ী বাবুল হোসেনকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি এবং জানি। তাকে এর আগে মাসে ৩০ কেজি ভিজিডি'র চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শীতকালীন শীতবস্ত্র এবং পরিষদের পক্ষে থেকে ১০ কেজি চাল দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বাবুল মিয়ার এখনও ৬৫ বছর হয়নি, তবে ৬৫ বছর হলে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে। আমার ইউনিয়নে প্রায় শতভাগ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে।