ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের মধুপুরে কৃষিমন্ত্রী বলেন- বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়, নির্বাচনে আসতে চায় না

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৭:৪০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো আইনানুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। এজন্য কিছুদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়।
এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্মতির পর গত রোববার বিলটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ এটি আইনে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, এই কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ইতিমধ্যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদনের পর আজ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নানান আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আন্দোলন করে, হুমকি দিয়ে সংবিধানের বিধান থেকে আমাদের সরাতে পারবে না। বিএনপি আসুক বা না আসুক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়, নির্বাচনে আসতে চায় না। তবে আমি আশা করি, তাদের সুমতি ফিরে আসবে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং দেশে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সরকার এমন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, যার উপর সকলের আস্থা থাকবে। এ কমিশন সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, প্রশাসনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ কারওই দায়িত্ব থাকবে না নির্বাচনের বিষয়ে। এ কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। কাজেই কোন দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, সে দায়দায়িত্ব তাদের।
শনিবার সকালে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি আশ্রয়ন প্রকল্পে ও স্থানীয়দের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল, মাস্ক ও আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এদেশের গরীব দু:খী মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। এ দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। ঠিকমত চিকিৎসা সেবা পাবে। বাঙ্গালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি আজীবন কাজ করেছেন। কিভাবে গরীব দু:খী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনা যায় সেটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। তিনি কিভাবে দেশ স্বয়ংসম্পন্ন হবে তা নিয়ে ভাবতেন। সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করে যাচ্ছে। এখন দেশে কোন খাদ্য সংকট নেই। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে গৃহহীন কোন মানুষ যেন না থাকে, সেলক্ষ্যে সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। যাতে আশ্রয়নে গৃহহীনরা সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। মধুপুরের আদিবাসী গারোদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, বাঙালি, গারো, হাজং, চাকমা, মারমাসহ অবাঙালি ও সকল ধর্মের বর্ণের সবাই মিলে আমরা একটা পরিবার। বর্তমান সরকার আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু কিছু এনজিও আদিবাসীদের উন্নয়নের নামে বিদেশি সাহায্য এনে নিজেদের ব্যক্তিগত উন্নয়নে ও বাড়ি-গাড়ি কেনায় তা ব্যয় করছে। এ ব্যাপারে আদিবাসীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান মন্ত্রী। গারোদের উপর বন বিভাগের অযৌক্তিক মামলা প্রত্যাহারে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, কোন গারোকে তাঁর বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না এবং কেউ বন বিভাগের অযৌক্তিক মামলার মাধ্যমে হয়রানির শিকার হবেন না।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ অসহায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এসব ভাতা প্রদানে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা যাবে না। ব্যাংকের বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার যেভাবেই দেয়া হোক, এ ভাতা তোলার আগে বা পরে যাতে ঘুষ দিতে না হয়; সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শক্ত হাতে আইনের প্রয়োগ করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, শোলাকুড়ির মানুষের সাথে যেন আমার আত্মিক সম্পর্ক। করোনার মহামারির কারণে আমার আসাটা দূরে রেখেছে। এ এলাকার মানুষের শিক্ষার জন্য কলেজ করে দিয়েছি। যাতে বাড়ির কাছেই এ এলাকার শিক্ষার্থীরা এ কলেজে পড়ার সুযোগ পায়, দূরে যেতে না হয়। এ এলাকায় প্রচুর পরিমানে আনারস, কলাসহ কৃষি ফসল উৎপন্ন হয়। সেজন্য জামালপুরের নান্দিনা থেকে জলছত্র পর্যন্ত রাস্তা প্রসস্ত করে মহাসড়ক করা হবে। যাতে দূর দূরান্তের মানুষ সহজে মধুপুর বন দেখতে আসতে পারে ও কৃষিপণ্য সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থানে নিতে পারে। মধুপুর বনের দোখলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুারাল ও রিসোর্টের নির্মাণ কাজ চলছে এবং একটি লেক করা হবে। আমি মানুষের সেবা করতে আসছি। এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। সবাই মিলে মিশে কাজ করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকা নিতে হবে।  
মধুপুর উপজেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস আয়োজিত অনুষ্ঠানে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, মধুপুর পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, মধুপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে দুইশ’ জনের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার শীতবস্ত্র কম্বল, মাস্ক বিতরণ করা হয়। এ সময় নতুন আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মাঝে দলিল হস্তান্তর করা হয়। পরে কৃষিমন্ত্রী মধুপুরের কুড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের ভবণ নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেন।