ঢাকা, শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিশ্বনাথের লামাকাজিতে সংঘর্ষের ঘটনায় আসামি ৩৬১, গ্রেপ্তার ২৭

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৮ অক্টোবর ২০২২ ১২:২৪:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

সিলেটের বিশ্বনাথের লামাকাজী পয়েন্টে অটোরিকশা চালকের নিকট থেকে ১০ টাকা টোল আদায়কে কেন্দ্র করে ৬ গ্রামবাসীর সংর্ষের ঘটনায় পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে আটক করা ২৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার (১৭ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ওইদিন (সোমবার) সকালে থানার এসআই বিনয় ভূষন সরকার বাদী হয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ২৭ জনসহ ৩২৭ জনকে অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নম্বর ৮)। মামলায় ৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ জনকে।

এর আগে রোববার (১৬ অক্টোবর) রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লামাকাজী পয়েন্টে অটোরিকশা থেকে ১০ টাকার টোল আদায় করাকে কেন্দ্র করে ৬ গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্বনাথ থানার দুই ওসি, দুই এসআই, চার কনস্টেবল ছাড়াও উভয়পক্ষের কমপক্ষে শতাধিক লোকজন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৭০ জনকে আখালিয়াস্থ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনার রাতে পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা পৌঁছে রাতভর অভিযান চালিয়ে ২৭ জনকে আটক করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- গোলাম মওলা (৪২), সালেহ আহমদ (৪০), নজির মিয়া (১৮), ইকবাল হোসেন (২৪), আরিফ উদ্দিন (৩২), সাকরান আহমদ (২০), আব্দুল হক (৩২), আলী আহমদ (৩৫), শফিক মিয়া (৩২), সুমেল আহমদ (২২), হোসাইন আহমদ (২০), হাফিজুর রহমান (২৬), জাহেদ মিয়া (২৫), জুনেদ আহমদ (১৯), আবুল খয়ের (৩৫), মাহবুব হাসান জুবায়ের (২২), শাহীন মিয়া (২৩), রফিকুল ইসলাম বাবুল (৩৭), কালা মিয়া (৪৫), আশিদুল হক (৩০), হোলাল হোসেন (২৭), সমুজ আলী (৩০), ইমরান আহমেদ (১৯), একেএম দুলাল (৪৯), ইসলাম উদ্দিন (৩২), আব্দুর রহিম (২৯) ও আব্দুস শহীদ (৩৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার রাত ৯ টার দিকে লামাকাজী পয়েন্টে (এম.এ খান সেতুর) ১০ টাকা টোল না দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে নিজ শ্বশুর বাড়ি বিশ্বনাথের মির্জারগাঁও থেকে শ্যালকসহ সিলেট জালালাবাদ থানাধীন নিজ বাড়ি জাঙ্গাইল গ্রামে যাচ্ছিলেন অজ্ঞাতনামা এক চালক। এসময় পেছন থেকে টোল-বক্সে কর্মরত কাজিরগাঁওয়ের কামাল নামের লাইনম্যান দৌঁড়ে গিয়ে তাকে আটকান।

এনিয়ে প্রথমে দুজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এরপর ওই চালকের পক্ষ নিয়ে মির্জারগাঁওয়ের গোলাম মওলা ও জাকারিয়া টোলবক্সে হামলা চালান। এতে মৎস্যজীবী জাঙ্গাইল ও মির্জারগাঁও গ্রামবাসী এক পক্ষে এবং কাজিরগাঁও, সাঙ্গীরাই, মোল্লারগাঁও, কেশবপুর ও দোকানীপাড়ার বাসিন্দারা অন্যপক্ষে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে জাড়িয়ে পড়েন। এতে প্রায় ৩ ঘন্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানচলাল বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগও।

এসময় সংঘর্ষ চলাকালে লামাকাজী পয়েন্ট ও বাজারের শতাধিক দোকানপাট ও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ইট-পাটকেলের আঘাতে থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান, তদন্ত ওসি জাহিদুল ইসলাম, এসআই অমিত সিংহ, এসআই বিনয় ভূষন সরকার, কনস্টেবল রফিক মিয়া, কামরুল ইসলাম, শামীম আহমদ, সুজন আহমদ, টোলবক্সের সাব-মালিক একেএম দুলাল, কর্মচারী কামাল মিয়া নজির মিয়া, ফয়সল আহমদ, আব্দুল হক, সুজাদ মিয়া, এনাম মিয়া, সাকরান আহমদসহ প্রায় শতাধিক লোকজন আহত হন।

ঘটনার খবর পেয়ে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অব:) শেখ মো. সেলিম, ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম ও সিলেট গোয়েন্দা (ডিবি উত্তর) পুলিশের ওসি রেফায়েত উল্লাহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫ রাউন্ড গ্যাস-গানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর রাতভর অভিযান চালিয়ে ২৭ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন।

লামাকাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া ও ইউপি সদস্য এনামুল হক এনাম বলেন, নিরুপায় হয়ে তারা ফেসবুকেও পুলিশ সুপারের সহযোগীতা চেয়ে স্টেটাস দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও লামাকাজী পয়েন্টে শতাধিক দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।

লামাকাজী পয়েন্টের ব্যবসায়ী ডা: শাহনুর হোসাইন ও আব্দুশ শহীদ বলেন, পয়েন্ট ও লামা বাজারের শতাধিক দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

লামাকাজী টোল প্লাজার মালিক রাহাত হোসেন বলেন, ওই অটোরকিশা চালক ১০ টাকা টোল না দিয়েই জোরপূর্বক চলে যেতে চাইলে লাইনম্যান কামাল তাকে টোল আদায় করে যেতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার নিকটাত্মীয়রা টোল প্লাজায় হামলা করে লাখ টাকা লুটপাট করে নেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মির্জারগাঁওয়ের গোলাম মওলা জানান, টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা কাজিরগাঁওয়ের কামাল আহমদ তার নিকটাত্মীয়কে অন্যায়ভাবে জাতিগতভাবে হেয় করায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, ঘটনাটি দুঃখজন। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সে জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০ টাকার টোল আদায়কে কেন্দ্র করে ৬ গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে থানার ওসিসহ ৮ পুলিশ সদস্য আহত হন। এঘটনায় পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।