ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬শে পৌষ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাবাইচ : তিতাস নদীতে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গর্জে ওঠলো সুন্দইরা মাঝির বৈঠা

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
ভাটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসব নৌকাবাইচ। বছর ঘুরে আসে এই প্রতিযোগিতা। সংস্কৃতির জনপদ তিতাসপাড়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবারও উৎসবমুখরতায় সম্পন্ন হলো ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ। পুরো বছরজুরে অধীর আগ্রহের পর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সামিল হতে বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই তিতাসপাড়ে ভিড় করতে শুরু করেন ক্রীড়ামোদী দর্শকেরা। উৎসবে মাতোয়ারা তিতাসপাড়। দুপুর গড়াতেই তিতাসবক্ষে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গর্জে ওঠলো সুন্দইরা মাঝির বৈঠা। পড়ন্ত বিকেলে লাখো জনতা উপভোগ করেন ঐতিহ্যের এই নৌকাবাইচ।
 
 
শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর অপসংস্কৃতির বেড়াজালে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব আর সংস্কৃতি। তবুও যেটুকু টিকে আছে, তাতেই খুশি সহজ সরল মানুষগুলো। তাদের জন্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের এই আয়োজন। বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার নৌকাবাইচ তাদের নিয়ে গেছে এক রকম ঘোরের রাজ্যে। নৌকাবাইচ উপলক্ষে গোটা শহরজুড়েই তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ। ভাদ্রের তপ্ত দুপুর গড়ানোর আগেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট বড় নৌকা নিয়ে উৎসাহী দর্শকরা নদীর দুই পাড়ে হাজির হতে থাকেন।
 
2-606


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লি., দারাজ বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর সহযোগিতায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছ্বাসে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি গাঁওগেরাম পার্ক এলাকা থেকে মেড্ডার শিশু পরিবার এলাকায় তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয় এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের চারটি, বিজয়নগর উপজেলার পাঁচটি, নবীনগর উপজেলার দুইটি, আশুগঞ্জ উপজেলার দুইটি এবং নাসিরনগর উপজেলার একটিসহ মোট ১৫টি দল প্রতিযোগী দল তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং বে-রঙের বাহারি পোশাক পড়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা চলার সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়। বিকেল তিনটার দিকে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি গাঁওগেরাম এলাকায় নৌকাবাইচের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।


নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা শেষে মেড্ডার কালাগাজী মাজার এলাকায় পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসীম উদ্দিন। প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলার নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সরাইল উপজেলার নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে আশুগঞ্জ উপজেলার নৌকা। পরে প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ট্রফি উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এছাড়াও প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দলকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। 
 
 
এদিকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশ এলাকা থেকে হাজার-হাজার মানুষ তিতাসের দুই পাড়ে, বিভিন্ন ভবনের ছাদের উপর ভীড় জমায়। অনেকেই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে পরিবার পরিজন নিয়ে তিতাস নদীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়।প্রতিযোগিতা চলার সময় শিমরাইলকান্দি গাঁওগেরাম এলাকা থেকে মেড্ডা শিশু পরিবার এলাকা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি মোবাইল কোর্ট টিমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, নৌ-পুলিশ, ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম  কয়েকটি টীম নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও  ছিল ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টীম। নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।