যশোর-খুলনা মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ২০২০ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তা হচ্ছেনা। সময় বেড়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। একই সাথে সরকারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরামর্শকের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান থাকাবস্থায় ৮ কিলোমিটার সড়ক ফুলে ফেঁপে উঠে। ওই সময় সরকার বুয়েটের একজন শিক্ষককে পরামর্শক নিয়োগ করেন। তিনি সরেজমিন ঘুরে সড়কের দু’পাশে ওয়ারিং করার সুপারিশ করেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ জানান, সড়কে আঁকা-বাকা হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছিল। সেগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দিয়েছে। আমাদের পরামর্শকের সুপারিশ অনুযায়ী সড়কের দু’পাশে হার্ডসোল্ডার ওয়ারিং করা হবে। কেননা রাস্তার পাশে দেড় মিটার নিচু থাকার কারণে গাড়ির চাপ পড়ছিল রাস্তার মাঝখানে। যে কারণে সড়কের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত মাসের একনেক সভায় সরকার এই টাকা বরাদ্দ করেছে।
সওজ সূত্র জানায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার উন্নয়নে ৩শ’২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজটি সম্পন্নের হবার চুক্তি ছিল। মহাসড়কটি যশোর শহরতলীর পালবাড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার রাজঘাট পর্যন্ত নতুন করে নির্মিত হচ্ছে। ২৭ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব এন্ড ব্রাদার্স, তমা কনস্ট্রাশন এন্ড কোং। অথচ ৮ কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছিল উঁচুনিচু অবস্থা। ফুলে-ফেঁপে উঠায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। সড়কটি বর্তমানে ২৪ ফুট চওড়া রয়েছে। এটি আরো ১০ ফুট উন্নীত করে ৩৪ ফুট চওড়া ও দুই লেন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়কের নতুন করে ভিত তৈরি করে সাড়ে ৪ ফুট থেকে ৫ ফুট গর্ত করে প্রথমে বালি ফিলিং, পরে বালি ও খোয়া এবং শেষে বালি ও পাথর মিশিয়ে ভরাট করার নিয়ম রয়েছে। এরপর বিটুমিন সারফেস ৫ ইঞ্চি দিয়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
সড়ক দুটির কাজের শুরুতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক উন্নয়নের এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের কোন নিয়মনীতি মানেনি। তারা গোজামিল দিয়ে ইচ্ছামত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঠিকাদাররা সড়কের পুরনো বৃটিশ আমলের লোনা ধরা ইট ও খোয়া তুলে সেটাই আবার ভেঙ্গে গর্তে ব্যবহার করেছেন। যা দরপত্রে বলা হয়নি। এছাড়া, সড়কটি ৫ ফুট গর্ত করে ভিত তৈরির নির্দেশনা থাকলেও সেই নিয়মও মানেনি। সড়কে নতুন ইট বালি, খোয়া ব্যবহার না করে খুঁড়ে উঠানো মালামালই ফের ভরাট করা হয়েছে।
যশোর-খুলনা সড়কের বসুন্দিয়ার বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন জানান, নিয়ম মেনে সড়ক নির্মাণ করা না হলে সেটি বেশিদিন স্থায়ী হবেনা। সড়ক নির্মাণের শুরুতে অনিয়ম হলেও কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা আমরা দেখিনি। আমাদের এলাকার সড়কেও তৈরি হয়েছিল আকাবাঁকা। পরে সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে।
যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বাবলু বলেন, সম্প্রতি খুলনায় গিয়েছিলাম। নতুন নির্মিত সড়কে এমন ফুলেফেঁপে উঠা কখনও দেখিনি। সওজের সাথে আতাত করে ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজে অনিয়ম করার কারণে এমনটি হয়েছে। এতে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সড়কটির কাজ চলমান থাকাবস্থায় কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছিল। সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। সড়কের কাজও শেষ হয়েছে। এখন সড়কের দু’পাশে হার্ডসোল্ডার ওয়ারিং করব। এতে সড়কের স্থায়িত্ব বাড়বে। সড়কটির প্রকল্পে না থাকায় দু’পাশে দেড় মিটার নিচুভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এজন্য গাড়িগুলো নিচে নামতে না পারার কারণে মাঝ বরাবর চলাচল করেছে। এখন নতুনভাবে হার্ডসোল্ডার ওয়ারিং করা হলে সড়কের সব সম্যার সমাধান হবে। গাড়িগুলো পাশ দিয়েও চলাচল করতে পারবে।