রাজশাহী জেলার উপজেলা গুলোতে আম চাষের পাশাপাশী স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা আয়ে সুমিষ্ট মৌসুমী ফল, উন্নত জাতের বরই চাষে কৃষকের ভাগ্যে উন্নয়নে নতুন চমক সৃষ্টি করেছে।
স্বল্প সময়ে অধিক ফলন মৌসুমী এই বরই ফল ইতোমধ্যে বাগান থেকে সংগ্রহ ও বাজারজাত করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে বাজারদর ভালো থাকার ফলে সন্তোষ প্রকাশ করছেন এলাকার বরই চাষীরা।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে এই জেলায় ব্যনিজিক ভাবে মোট ৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের বরই। যার মধ্যে ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে কাশ্মীরি ও ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বল সুন্দরী জাতের বরই।এছাড়াও এ অঞ্চলে কাশ্মিরী, বাউকূল, আপেল কূল, বলসুন্দরী জাতের বরই ও চাষ হচ্ছে।
চলতি বছরে প্রতি হেক্টরে আড়াই থেকে ৩মেট্রিক টন বরই উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করছে জেলা কৃষি অধিদপ্তর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোদাগাড়ীর আকতার হোসেনের বাগানের প্রতিটি গাছে অসংখ বরই ধরেছে। ফলের ভারে গাছসহ ডালগুলো মাটির দিকে ঝুলে পড়েছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে প্রতিটি বড়ই গাছ। পাখি ও চোরের হাত থেকে বরই রক্ষা করার জন্য পুরো বাগান চারপাশে জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
চারঘাট উপজেলার মানিক মিয়ার বরই বাগান খয়েরী সবুজে সমারোহ। এতটায় বরই ধরেছে গাছের পাতা দেখা যায়না।তিনি বরই গাছ পাহারা দেওয়ার জন্য বাগানের এক পাশে উঁচু করে মাচা তৈরি করে রেখেছেন। রাতে বাগান মালিক নিজেই উঁচু মাচাই বসে বাগানটি পাহারা দেন। বরই চাষ করে মানিক মিয়া এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি শখ করে ১বিঘা জমিতে ৯ মাস আগে বল সুন্দরী নামক বরই এর বাগান তৈরি করি। বর্তমানে আমি গাছ থেকে বরই তুলতে শুরু করেছি। প্রতি মণ বরই ২৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রয় করছি। আমি আশা করছি এবার এই জমি থেকে আমি ৬০ থেকে ৭০ মণ বরই পাবো।
তানোরের বরই চাষী তুষার জানান, আমি রাজশাহী হার্টিকালচার থেকে বরই চারা দেখে এসে নিজেই বরইয়ের বাগান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে ৬ একর জমিতে বরইয়ের বাগান করেছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বরই অধিক লাভজনক চাষ বলেও জানান তিনি। প্রতি মণ বল সুন্দরী বড়ই ২৬০০টাকা দরে বিক্রি করছি।তার বাগানের বরই বিক্রেতারা বাগানে এসে নিয়ে যাচ্ছে।
বাগান পরিচর্যাকারীরা রাসেল বলছেন , বরই বাগানে তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয়না। প্রথমে গাছ লাগানো এবং জমি তৈরীর পর কীটনাশক ও যৎসামান্য পরিচর্যা ছাড়া কঠিন কোন পরিচর্যা করতে হয়না ।
জেলা কৃষি অফিসার জানান, সবচেয়ে সুস্বাদু , চাহিদা,অল্প পরিশ্রমে বেশি ফলন ও লাভজনকব হবার ফলে এই জেলার উপজেলা গুলোতে বলসুন্দরী জাতের বরই বেশী চাষ হচ্ছে। ফল চাষে মুনাফা অধিক ও মাটির গুণগত মান ভালো থাকায় এ উপজেলার কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার আরেক নাম বরই চাষ সংযুক্ত হয়েছে।অল্পসময়ে আম বাগানেই সাথী ফল বাগান হিসেবে বরই চাষ সহ নতুন করে বরই বাগান তৈরীতে স্থানীয় কৃষকেরা ঝুঁকে পড়েছেন।
তিনি আরো জানান, আম চাষ ব্যাপক লাভ জনক হলেও আম বাগান করার পর প্রায় দু বছর পর আম পাওয়া সম্ভব কিন্তু বরই স্বল্প সময়ে পাওয়া সম্ভব এবং এটি একটি লাভ জনক চাষ পদ্ধতি বটে। তাই অধিক লাভের আশায় কৃষকেরা বরই চাষে ব্যাপক ভাবে ঝুঁকে পড়েছে।