দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিঃ মিঃ পূর্ব দিকে ৩ নং আলীহাট ইউনিয়নের কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের নিজ খরচে তুলশিগঙ্গা নদীতে তৈরি করা কাঠের সেতুটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বেহাল অবস্থায় থাকা সেতুটি দিয়ে পাঁচ গ্রামের মানুষ, মোটরসাইকেল ও যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে যে কোনো সময় সেতুটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করছে ভ্যান-রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেলসহ আশপাশের এলাকার মানুষজন। দুই একটি ভ্যান, মোটরসাইকেল কিংবা লোকজন উঠলেই সেতুটি নড়েচড়ে উঠছে। তুলশিগঙ্গা নদীটি পারাপারে একমাত্র সেতু হওয়ায় ঝঁকি নিয়ে সবাই পারাপার করছেন সেতুটি দিয়ে।
তুলশিগঙ্গা নদীতে কোন দিনই সেতু ছিল না। সেতু না থাকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানীয় বাসিন্দাদের কষ্ট করে যাতায়াত করতে হতো। নদী পারাপারের জন্য ছিলো ছোট একটা নৌকা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের উপর মহলে সেতুর জন্য ধর্ণা দিয়েও গ্রামের স্বপ্ন পূরন হয়নি।
বছরখানেক আগে স্থানীয় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা নিজ খরচে তাদের প্রচেষ্টায় নির্মাণ করেন কাঠের এই সেতুটি। পরবর্তীতে গত পবিত্র ঈদুল ফিতর এর দিন স্বপ্নের সেই সেতুটি উদ্বোধন করেন হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন। কিন্তু সেতুটি তেমন মজবুদ নই। একটি মটোরসাইকেল ও একটি ভ্যান একসাথে উঠলেই নড়তে থাকে সেতুটি। মনে হয় কখন যেন নিছে নদীতে পড়ে যাই।
আলীহাট ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতর এর আমাদের কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা নিজেদের চেষ্টায় সেতুটি তৈরি করে। কাঠের এই সেতু দিয়ে অত্র আলীহাট ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের লোকজন যাতায়াতসহ হিলি ও পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে সাধারণ মানুষ।
ছোট আলীহাট গ্রামের রমেনা বেগম বলেন,নিজের অসুস্থতার জন্য জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিব হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেতুটির জন্য ভ্যান বা কোন গাড়ি আসতে চাইনা। একটি সেতু থাকলে এমনটি হতো না। এছাড়া কাঠের সেতুটি দিয়ে বর্তমানে চলাফেরা করা খুব বিপদজনক হয়ে উঠছে।
এমদাদুল হক নামে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, এই নদী পড়াপাড়ের জন্য এটিই একমাত্র সেতু। আশেপাশেও কোন ব্রিজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে নড়বড়ে কাঠের সেতু দিয়ে চলাচল করি। গাড়ি সেতুতে উঠলে জীবন আর জীবন থাকে না। মনে হয় কখন যেন ভেঙে পড়বে সেতুটি। তাই সরকার যদি এখানে একটা ব্রিজ নির্মাণ করে দিতো তাহলে আমাদের অনেক উপকার হতো।
ভ্যানচালক মোর্শেদ আলী বলেন, ধাওয়ানশীপুর আলীহাটসহ কয়েকটি গ্রামের যাত্রী নিয়ে সারাদিন এই সেতু পার হয়ে ডুগডুগি বাজারে যাওয়া-আসা করি। কাঠের সেতুটি এতোই নড়ে যে যাত্রীদের নামিয়ে সেতু পার হওয়ায় যায় না। বধ্য হয়ে যাত্রী নেমে দিয়ে খালি ভ্যান পাড় করতে হয়।
আলীহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, কাশিয়াডাঙ্গা ব্রিজের জন্য টেন্ডার হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আশা করছি ব্রিজের নির্মাণ হলে ৫ গ্রামের মানুষের কষ্ট দুর্দশা দূর হবে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ আলম বলেন, পাঁচটি গ্রামের মানুষ কষ্ট করে কাশিয়াডাঙ্গা নদী দিয়ে চলাচল করেছেন। সেতু না থাকায় তাদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে এই নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের সব প্রস্তিত নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সেতু নির্মাণ শুরু হবে।