ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

১৫ বছর কাটলো, স্থানান্তর হলো না কারওয়ান বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৫ জানুয়ারী ২০২২ ১১:২৬:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

 

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে কারওয়ান বাজার। এই কাঁচাবাজারে আছে আড়তসহ দুই হাজার ৩০১টি দোকান। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আটটি সমিতিও গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় এ কাঁচাবাজারে। বাজারের জায়গা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। বাজার মানেই অসংখ্য মানুষ, বাহনের আনাগোনা। নগরীর কেন্দ্রে জটলা কমাতে তাই উদ্যোগ নেওয়া হয় এই বাজার স্থানান্তরের। কিন্তু ১৫ বছর কেটে গেলেও বাজার আছে সেই আগের স্থানেই। প্রকল্পের কাজ চলছে ঢিমেতালে।

কারওয়ান বাজার স্থানান্তরে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। বৃহৎ এ বাজার বিকেন্দ্রীকরণ করে তিন স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। স্থান নির্বাচন করা হয় আমিনবাজার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ী। এর মধ্যে একটির কাজ শেষ, একটির চলমান এবং একটির কাজ কিছুটা স্থবির হয়ে আছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা মহাখালী কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজ শেষ। তবে দোকানের পরিসর ছোট হওয়ায় সেখানে যেতে প্রথম থেকেই আপত্তি ব্যবসায়ীদের। এরই মধ্যে দেশে কোভিডের প্রকোপ বাড়ায় সংকট নিরসনে কাঁচাবাজারটিকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। এখনো সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বহুতল ভবনে সবজির ব্যবসা পরিচালনায় অনীহা প্রকাশ করেন প্রথম থেকে। এজন্য আমিনবাজার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কাঁচাবাজারটি একতলা টিনশেডের নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এখানের নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মো. মোজাম্মেল হক বলেন, প্রকল্পের আওতায় তিনটি কাঁচাবাজার নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে মহাখালী কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন। বর্তমানে এটা কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আমিনবাজার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কাঁচাবাজার এখনো নির্মাণ শেষ হয়নি।

অপরদিকে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজও শেষ হয়নি। তবে কাজ চলছে টিনশেড এই বাজারের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানায়, চলতি বছরের জুন মাসে শতভাগ কাজ সমাপ্ত হবে। জুলাই থেকে প্রায় দুই হাজার কাঁচাবাজার বরাদ্দ দেওয়া শুরু হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহাম্মদ বলেন, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজ জুন মাসে শেষ হবে। আশা করছি জুলাই মাসে দুই হাজার দোকান বরাদ্দের কাজ শুরু করতে পারবো।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা যেন নতুন করে তৈরি কাঁচাবাজারে যেন ব্যবসা নিয়ে আসেন, সে লক্ষ্যে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কারওয়ান বাজার থেকে মহাখালীর নবনির্মিত কাঁচাবাজারে আসতে অনীহা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে অনেকে কারওয়ানবাজারে ব্যবসা করছেন। পুরোনো স্থান ছেড়ে কেউ যেতে চান না। স্থায়ী ক্রেতা হারানোর ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী কাওরান বাজারে আঁকড়ে থাকতে চান।

লক্ষ্মীপুর স্টোরের মালিক মো. আবুল কাশেম খান ৪৬ বছর ধরে কাওরান বাজারের গ্রোসারি পণ্য বিক্রি করেন। আবুল কাশেম খান বলেন, ৪৬ বছর ধরে কাওরান বাজারে ব্যবসা করি। আমার অনেক স্থায়ী ক্রেতা আছে। নতুন জায়গায় গেলে ক্রেতা হারাবো। কাওরান বাজার ছেড়ে কোথাও যাবো না।

মহাখালী কাঁচাবাজারে দোকানের জায়গা ১১০ থেকে ১২০ বর্গফুটের বেশি নয়, যেটা পাইকারি কাঁচাবাজারের জন্য ব্যবসাবান্ধব বলে মনে করেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের মত, বহুতল ভবন কখনো কাঁচাবাজারের জন্য সঠিক পরিকল্পনা নয়। বহুতল ভবন শপিংমলের জন্যই উপযুক্ত। এজন্য যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজার বেড়িবাঁধের কাছে টিনশেডে কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এসব স্থানে কাওরান বাজার ব্যবসায়ীরা যাবে না বলে দাবি ব্যবস্যায়ীদের।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নির্মিত ও নির্মাণাধীন তিনটি কাঁচাবাজারে কাওরান বাজার স্থানান্তর হবে না। ঢাকার প্রবেশদ্বার বসিলা, সাভার ও যাত্রাবাড়ীতে কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে হবে। মহাখালীতে আরো জটলা হবে। কাঁচাবাজারের জন্য স্পেস বাড়াতে হবে। স্বল্প পরিসরে কাঁচাবাজার হয় না। আমার মনে হয় না ব্যবসায়ীরা কাওরান বাজার ছেড়ে অন্য কোথাও যাবে।

ঢাকা মহানগরীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ‘ঢাকা শহরে তিনটি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালের জুন মাসে। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এরই মধ্যে ১৫ বছর পার হলেও একটি কাঁচাবাজারের কাজ শেষ হয়েছে। আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীর কাজ এখনো বাকি। প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩১ কোটি টাকায়। সঙ্গে বাড়ে সময়। জুলাই ২০০৬ থেকে জুন ২০১২ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা।