ঢাকা, শুক্রবার ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০শে পৌষ ১৪৩১

‘শখ পূরণে হাতি-ঘোড়ার শোভাযাত্রায় পালকিতে বিয়ে’

বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:০৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল জমকালো বিয়ে, যেখানে বরযাত্রীদের শোভাযাত্রা সজ্জিত হতো হাতি, ঘোড়াসহ পালকির মতো রাজকীয় উপকরণে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ ধরণের আয়োজন হারিয়ে গেলেও ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এক জমকালো বিয়ের আয়োজন ফিরিয়ে এনেছে সেই ঐতিহ্যের স্বাদ। ৪ বেহারার পালকিতে আসবে বউ তাইতো ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে সকাল থেকেই। 

অপরদিকে, হাতিতে চড়ে যাবে বর তাইতো হাতিকেও দেওয়া হচ্ছে রাজকীয় সাজ। আবার বরযাত্রীদের জন্য সাজানো রয়েছে টমটম গাড়ি। সকাল থেকে সাজগোজের পর রাজার তরবারি হাতে নিয়ে হাতিতে চেপে বসেন বর। সানাইয়ের সুরে সুরে বরযাত্রী নিয়ে ছুটে চলে কনের বাড়িতে। ব্যতিক্রমী এমন বিয়ে হয়ে গেলো ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নবগ্রামে। ভিন্নধর্মী এ আয়োজন দেখতে বিয়ে বাড়িতে ভীড় করেন আশপাশের কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ।

জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জেবা খাতুনের সাথে ৬ মাস আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো একই গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে নিশানের। প্রেমের বিষয়টি পরিবারকে জানালে উভয় পরিবার রাজি হয় এ বিয়েতে। একমাত্র ছেলেকে রাজকীয় ভাবে বিয়ে দিবেন এই শখ থেকেই ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাতি, টমটম গাড়ী আর পালকি আনেন বিয়ের জন্য। দিনক্ষণ ঠিক করে ৩০০ বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে যান নিশান। নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে পূরণ হয় দুইজনের ভালোবাসা আর বাবা মায়ের শখ।

আধুনিকতার যুগে এমন বিয়ে দেখে অভিভুত স্থানীয় ও বরযাত্রীরা। সেই সাথে রাজকীয় বিয়ের শখ পুরণ করতে পারায় খুশি পরিবারের সদস্যরা।

বরের মা রিক্তা খাতুন জানান, ছেলেকে হাতির পিঠে সাজিয়ে কনে আনতে পাঠাতে পেরে আমি অনেক খুশি। আমাদের এলাকায় হাতির পিঠে চড়ে বরের বিয়ে করতে যাওয়া আগে কখনো দেখা যায়নি। তাই বর যাত্রা দেখে আমাদের মতো গ্রামবাসীও আনন্দ পেয়েছে।

নিশানের দাদা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, আমার আশা ছিল বড় নাতি হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে যাবে। সেই আশা আজ পূর্ণ হলো। এজন্য আমি খুব খুশি।

বর নিশানের বাবা ফারুক হোসেন ঢাকায় ব্যবসা করেন। আর মা রিক্তা খাতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন।

অপরদিকে কণে জেবা খাতুনের বাবা জাহাঙ্গীর আলম গ্রামের একজন কৃষক পরিবারের সন্তান, আর তার মা সুরাইয়া পারভীন একজন আদর্শ গৃহিণী।

কলে পিতা জাহাঙ্গীর আলমের জানান, উভয় পরিবারের সম্মতিত্বে এ বিয়েতে অনুষ্ঠিত হয়। এ বিয়েতে আমরা উভয় পরিবার অনেক খুশি।

বর নিশান জানান, ছয় মাস আগে জেবার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। পরে দুই পরিবারের সদস্যরাও সম্মতি দেন। তার ওপর দাদার আয়োজনে হাতির পিঠে চড়ে কণের বাড়ি যাওয়া আরও বড় আনন্দ। তাই আমরা দু’জনেই অনেক খুশি।

কণে জেবা খাতুন জানান, কলেজে পড়া অবস্থায় ছয় মাস আগে নিশানের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে এই বিয়ের আয়োজন। তবে পালকিতে চড়ে বড়ের বাড়ীতে যাওয়ায় আমার আনন্দ লাগছে। তাই আমি অনেক খুশি।

বরের পরিবারের সদস্যরা জানান, ছেলে-মেয়ে দুইজনে দুইজনকে পছন্দ করার বিষয়টি জানতে পারায় বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব যায়। কনে পক্ষও রাজি হয়ে যায়।

দাদা আব্দুল মান্নানের ইচ্ছায় আনা হয় হাতি ও পালকি। দুই ঘোড়ায় টানা টমটম পাবনা থেকে আনা হয়। ফুলে-ফুলে সেগুলোও সাজানোও হয়।

বর-কণে পক্ষ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় মেতে উঠে। ফুলে-রঙিন আলোয় সাজানো হয় তাদের বাড়ী। ব্যান্ড পার্টি বাজাতে থাকে তাদের বাদ্যযন্ত্র।

অবশেষে বর নিশান রাজকুমার বেশে হাতির পিঠে উঠে বসেন। এবং গ্রাম ঘুরে কনের বাড়িতে হাজির হন বর বেশে। হাতির পিছু পিছু টমটম গাড়ি চড়ে ও পায়ে হেঁটে সঙ্গী হন গ্রামের ছেলে-বুড়োসহ অনেকেই।

কণে বাড়িতে বরযাত্রী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্যও ছিল নানা পদের ভুরিভোজের ব্যবস্থা।

বর পক্ষের অতিথি বা বরযাত্রী পারভেজ হোসেন জানান, শুনেছি রাজা-বাদশাহরা হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে যেত। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সে দৃশ্য গ্রামে বসে দেখলাম। এমনকি আমি নিজেই বরযাত্রী হয়ে আসতে পেড়ে অনেকটাই খুশি লাগছে।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে