রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে পুকুর ভরাট অব্যাহত রয়েছে। পুকুর ভরাট নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, পরিবেশবিদগণ প্রতিবাদ করে আসলেও তেমন কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
হেরিটেজ রাজশাহী, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে রাজশাহী মহানগরীতে পুকুর ভরাট বন্ধের হাইকোর্টের একটি নির্দেশ আছে। যা অমান্য করে এখনো মহানগর এলাকায় পুকুর ভরাট চলছে।
রাজশাহী মহানগরীর ৩নং ওয়ার্ড বহরমপুরের সূর্য পুকুর ভরাটে এলাকাবাসীর বাধা সত্বেও কৃষক লীগ নেতার ভরাট কার্যক্রম চলমান। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভরাট বন্ধে সিটি কর্পোরেশন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে রাজশাহী মহানগর কৃষকলীগ সভাপতি মোর্শেদ কামাল রানা সূর্য পুকুর ভরাট কাজ শুরু করেন। সেসময় এলাকাবাসী বাঁধা দিলেও তাতে কোন লাভ হয়নি। তবে পটপরিবর্তনের পরপরই রানা গা ঢাকা দিলে পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু বর্তমানে ঐ এলাকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর সহযোগিতায় আবারও পুকুর ভরাট কাজ শুরু হয়। এলাকাবাসী বাধা দিলেও পুকুর ভরাট বন্ধ না হওয়ায় তারা গত ৩ নভেম্বর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দাখিল করে।
৩নং ওয়ার্ড বহরমপুর মৌজার দাগ নং ১১০ পুকুরটি ভরাট না করা প্রসঙ্গে" বিষয় উল্লেখ করে অভিযোগে এলাকাবাসী বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ড বহরমপুর মহল্লার মধ্যভাগে সূর্য পুকুর নামে পরিচিত পুকুরটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষকলীগের সভাপতি লক্ষ্মীপুর জেলা নিবাসী রানা পুকুরটি আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে এলাকাবাসীর বাধা উপেক্ষা করে ভরাট শুরু করেন। ৫ই আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গা ঢাকা দেন। বর্তমানে এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় পুনরায় পুকুরটি ভারাট করতে এলে এলাকাবাসী বাধা দেন কিন্তু তিনি কারও বাধা না মেনে পুকুরটি ভারাট করতে চাচ্ছেন।
তারা উল্লেখ করেন, বহরমপুর অনেক বড় একটি মহল্লা। এখানে আধুনিক বাড়ীঘর তৈরি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত পরিমানে না থাকায় পুকুরটি পুনরায় সংস্কার করা অতিব প্রয়োজন মনে করে এলাকাবাসী। কারণ অত্র বহরমপুর মহল্লায় আর কোন পুকুর নেই। অতএব, উপরোক্ত বিষয়টি তদন্ত স্বাপেক্ষে সু-বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুকুর ভরাট বন্ধ করে, সংস্কার করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দাবি জানানো হয় ।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে, ৭ নভেম্বর-২৪ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এরপর ১২ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করেন৷ প্রতিবেদনে তারা বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের আলোকে উপরোক্ত প্রাকৃতিক জলাধার আইন অমান্য করে নালিশী পুকুর ভরাট করে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করায় জনস্বার্থে উক্ত পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করা আবশ্যক। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে উল্লেখিত পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে পুকুরের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহে পত্র দেয়া যায়। উপরোক্ত তথ্য সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করা হলো।
জানতে চাইলে কৃষকলীগ নেতা মোর্শেদ কামাল রানা বলেন,যে পুকুর নিয়ে এত কথা, সে পুকুরের মালিক আমি সহ চারজন। পুকুরের ভরাটের কাজ আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে কোন ভরাট কাজ চলছে না৷ অর্ধেকের মত ভরাট হয়েছে। আমি এই পুকুর লক্ষীপুর এলাকার সুরমান সহ কয়েকজনকে বায়না দিয়েছি। এখন পুকুর ভরাটের কাজ ওদের হাতে।
এ বিষয়ে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের রাজশাহী মহানগর সম্পাদক রওশন আলী বলেন, রাজশাহী মহানগরীর অনেক পুকুর ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালীরা ভরাট করছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। মহানগরীর প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় পুকুর ভরাট বন্ধের আহবান জানাচ্ছি।
হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি, পরিবেশবিদ ও লেখক মাহাবুব সিদ্দিক বলেন, ২০১০ সালে রাজশাহী মহানগর এলাকায় পুকুর ভরা বন্ধু যে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন হাইকোর্টে ডিলিট করেছিলেন। হাইকোর্টের রায়ে মহানগরী এলাকা সকল পুকুর ভরা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরও যদি কোন পুকুর ভরাট করে বন্ধ করা হয় তাহলে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামাত খান বলেন, রাজশাহী শহরের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য পুকুর ভরাট বন্ধ করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আর কোন পুকুর ভরাট করতে আমরা দেব না। প্রয়োজনে আবারও আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
বায়ান্ন/এসএ