ঢাকা, বুধবার ৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪শে পৌষ ১৪৩১

৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ; মালামাল লুটপাট

আব্দুল কাইয়ুম,সাভার (ঢাকা) : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৩ অগাস্ট ২০২৩ ০৭:৫০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
সাভারে পরিবারের সবাইকে চেতনানাশক দ্রব্য দিয়ে অচতেন করে স্কুল ছাত্রী এক কিশোরীর হাত-পা, মুখ বেঁধে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এসময় নগদ টাকা, মোবাইল লুট করে নিয়ে যায় ধর্ষণকারীরা।
 
গুরুতর অবস্থায় কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় ভূক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
 
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতে ভুক্তভোগীর বড় ভাই বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে সাভারের ভাকুর্তার লুটেরচর গ্রামে তাদের নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ছাত্রী ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি স্কুলে নবম শ্রেনিতে পড়াশোনা করে।
 
ভূক্তভোগী ওই কিশোরীর ভাইয়ের দাবি, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। রাত দেড়টার দিকে ৩ আসামী ঘরে ঢুকলেও ধর্ষণে অংশ নেন ২ জন। আরেকজন দরজায় দাড়িয়ে ছিল। পরে ভোর ৫ টার দিকে বের হয়ে যায় তারা।
 
তিনি জানান, তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট ওই কিশোরী। অপর বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা একটি ব্যাংকের প্রাইভেটারের চালক, মা গৃহিনী। গত সোমবার দিবাগত রাতে বাবা-মা ও ছোট বোন রাতের খাবার খাওয়ার পর খাবার খান তিনি। খাওয়া শেষ হলে তাঁর বাবা অসুস্থবোধ করছেন বলে তাকে জানান মা। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এমন হয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি। নিজের কক্ষে যাওয়ার সময় ভূক্তভোগী ছোট বোনকে শুয়ে থাকতে দেখেন। নিজের কক্ষে গিয়ে পরিচিত একজনের সঙ্গে মোবাইলে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যান। পরে অভিযুক্তরা বের হয়ে গেলে মাকে ডেকে তুলে ছোট বোন। পরে মা ও বোন মিলেও বাবা-ভাইকে ডেকে তুলতে পারেনা। পরে প্রতিবেশীরা এসে ডেকে তুলে তাদের। পরে বোনের কক্ষে যান। বোনের কাছ থেকে জানতে পারেন রাতে গ্রিল কেটে তিনজন ঘরে ঢুকে হাত-পা, মুখে বেঁধে ধর্ষণ করেছে। ভাইকে ডাকলেও শুনতে পায়নি। এছাড়া ভুক্তভোগীর বোন আসামীদের আবার দেখলে চিনতে পারবে বলেও জানান তিনি।
 
তিনি বলেন, নগদ টাকা ও বেশকিছু স্বর্ণের অলংকার, দুটি মোবাইল নিয়ে গেছে ধর্ষণকারীরা। সাভার মডেল থানায় গতকাল মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতে অজ্ঞাত নামা ৩ জনেক আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 
 
ভূক্তভোগী ওই কিশোরীকে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে এবং বাবা-মাকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
 
স্থানীয় এক সাবেক ইউপি সদস্য এঘটনার জন্য দায়ী অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের বাসার পাশেই সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ আমাদের জমির বেশ কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে। এঘটনায় মামলাও করেছি। এরপর থেকেই আমাদের উপর ক্ষিপ্ত তাঁরা। তারাই আমার বোনের সর্বনাশ করেছে। মামলায় তিনি প্রতিবেশী কামাল, দ্বীন মোহাম্মদ, সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহের ছেলে আব্দুর রশিদ ও মাজাহার নামে ৪ জনের সাথে পূর্বের বিরোধের কথা উল্লেখ করেন।
 
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ হাবীব বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। জমি দখলের কোন ঘটনা ঘটেনি। একাধিকবার জমি মেপে বিষয়টির সমাধানও করা হয়েছে। এখন অযথাই আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দিচ্ছে। আমি চাই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক রাসেল মোল্লা বলেন, ঘরের মধ্যে চেতনা নাশক দ্রব্য কিভাবে আসলো, সেটি একটি প্রশ্ন। প্রাথমিক ধারনা, জানালা দিয়ে বাইরে থেকে এমন কোন দ্রব্য স্প্রে করে থাকতে পারে। ঘুমের ঘোরে কিশোরীকে গণধর্ষণ ও বাড়ির জিনিসপত্র লুটপাটের সত্যতা পাওয়া গেছে। পূর্ব শত্রুতার সূত্র ধরে পরিকল্পিত, নাকি লুটপাটের উদ্দেশ্যে ঢুকে গণধর্ষণের ঘটনা। অনেকগুলো বিষয় সামনে দাড়িয়েছে। তবে সবগুলো বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।